স্বাধীনতা মিশে গেছে

স্বাধীনতা মিশে গেছে- বহু দিন হয়
লুপ্ত ঝিল্লি’র মতো আকাশের পারে
তার পর বাহিরের পৃথিবীর থেকে ফিরে
কনুইয়ের ‘পরে ভর রেখে এই ন্যূব্জ অন্ধকারে
ব’সে আছি- হয়তো-বা এ-রকমই ভালো
পেঁচা’র স্রোতের মতো অন্ধকার- এখন প্রাণের কাছে শ্রেয়
আশ্চর্য মুকুরে তার জীবনের অলিগলিসন্ধি অনুমেয়
দারোয়ান মাঝে-মাঝে নেড়ে যায় চীনে-লণ্ঠনের মতো আলো
হে আদিম ভূত, তুমি উঠে এসো
এইখানে আলিসার নিবিড় নিশিত ছায়া ঢালো।

পিতৃপুরুষেরা সব বহু দিন সমুদ্রের পারে
গিয়েছিল পৃথিবীর সীমানার খোঁজে
তাহাদের কেউ-কেউ আকাশের নক্ষত্র, শ্যালক, শনি
খুঁজে গেছে ব্রাত্যের মতন পূর্ত স্বচ্ছন্দ গরজে
যেন কিছু দৈব বল প্রয়োজন আমাদের
তা না হলে চিরন্তন পরিব্রাজকের মতো চ’রে
আঘাটায় অন্ধকার ঘোরে
সন্নিবদ্ধ কিল খেতে হবে অন্ধ, ধৃষ্ট রাক্ষসের
বায়ুর ভিতরে তাই ধূম্রকেতু দেখা দিল-
অগ্নির ভিতরে স্থির কৃকলাস- এনামেল-করা স্বর্ণের পুচ্ছের

সমুদ্রের সীমার ভিতরে সেই নরলোক কী জিনিস পেল
কোন তূর্ণ বাজপাখি ধরা গেল সীমার ও-পারে
সেই সব হৃত বিদ্যা। তাহারা চকিত হয়ে স’রে গেছে
আমাদের স্থূল লৌকিক ব্যবহারে
সে-সব সোনালি বালি দূরে প’ড়ে আছে
মিনার, রাজার কন্যা গোধূলির জাফরান মেঘের আমোদে
ঘুরুনো সিঁড়ি যে-শীর্ষে উঠে গেছে জ্যামিতির মতো আত্মবোধে
অথবা নিটোল জল সুমেরীয় শিল্পে কাটা গেলাসের কাঁচে
যখন তর্কের শেষ সীমারেখা শান্তি চায়
নির্ভয়ে চ’লে আসে সকলের হৃদয়ের কাছে

এই সব জ্বালায়ে গিয়েছে ঈর্ষা পূর্বগামীদের
উদ্ভাবনা উঠায়েছে উদয়ের সূর্যের দিকে
কল্পনাকে নিয়ে গেছে ফিরোজা-রঙের দ্বীপে- পশ্চিমের-
মৎস্যনারী মৈথুনে তৃপ্ত ক’রে প্রবীণ জ্ঞানীকে
‘আবার আসিব’ ব’লে হেলিওট্রোপের মতো জলের ভিতরে
ডুবে গেছে মধ্যন্দিন সূর্যের আলোকে
এখন কুকুরগুলো দিন-রাত নৃমুণ্ডকে বকে
সম্রাটকে বসায়েছে অন্ধকার ঘরে
পায় না পায়ের নিচে একটি শনের মানে খুঁজে
যতই সে পাল তুলে হৃষ্ট মনপবনের ভরে

যেতে চায়। ঘুরিছে বার্ষিক গতি পৃথিবীর
ঘুরিতেছে দিকহস্তীদের শুঁড়ে ভয়ঙ্কর দৈনিক গতি
স্ফীত হয়ে নীহারিকাপুঞ্জ সব
আমলকী-স্তবকের মতো উঁচু মহাশূন্যের স্থিরমতি
আঘাত করিতে আছে ‘শেষ দান দিয়ে যাও’ ব’লে
ওষ্ঠপৃষ্ঠে যাহা কিছু লব্ধ আছে নিদ্রিত কিম্ভূত অগ্রদূত
তবু আমি- আমি তবু কোন্ প্রসাদের আজ হব অবধূত
যখন কল্কিশিশু প্রসূত হল না আর রমণীমহলে
পুরুষের শেষ দর্প নিরর্থক-
কোন্ সম্রাজ্ঞীকে আর কুলটাকে নেব তুলে কোলে।

অনেক পিছনে এসে পৃথিবীর পরম আয়ুতে
দেখি নি কি সব কাজ সাঙ্গ হয়ে গেছে- মানুষের
কিংবা সংক্রামক স্নিগ্ধ ধুয়ার মতন
মাথার ভিতরে আজও টানিতেছে জের
রিরংসার অবশিষ্ট কলি
জানি না তা বোঝে কী-না আপামর জনসাধারণ
আবার মিনার ভাঙো- রাজকন্যা লুটে আনো- চীনের ড্রাগন
আবার নিহত করো- অথবা নিজেকে দাও বলি-
এই কথা বলে তারা দাবা’র আসরে ব’সে হাড়ের রাজাকে
আর কার আছে আজ বজ্র মাতলি?

ঘোড়া’রা সাজুক তবে ঘুঁটির রাজার
সমুদ্রও মানচিত্র হোক- কম্পাসের-
অন্ধকার সিংহাসনে ব’সে আমি
ইহাদের অপর্যাপ্ত সময়পাশের
যেইটুকু দম আছে ইস্প্রিঙের বেগে-
আয়ুষ্কাল: নিমিত্তের ভাগী
হে কবন্ধ ভূত, আমি কী গঠন ক’রে আরও দু’-এক মুহূর্ত র’ব জেগে
কী ক’রে নৃত্যের থেকে নর্তকীকে মানবসমাজ
চিনে নেবে? অথবা বিঘূর্ণমান নিখিলের মুখ দেখে শেষ হবে কি তার কাজ?