সাগর-বলাকা

ওরে কিশোর, বেঘোর ঘুমের বেহুঁশ হাওয়া ঠেলে
পাতলা পাখা দিলি রে তোর দূর-দুরাশায় মেলে!
ফেনার বৌয়ের নোন্‌তা মৌয়ের- মদের গেলাস লুটে,
ভোর-সাগরের শরাবখানায়- মুসল্লাতে জুটে
হিমের ঘুণে বেড়াস খুনের আগুনদানা জ্বেলে!

ওরে কিশোর, অস্তরাগের মেঘের চুমায় রেঙে
নীল নহরের স্বপন দেখে চৈতি চাঁদে জেগে,
ছুটছ তুমি চ্ছল-চ্ছল জলের কোলাহলের সাথে কই!
উছলে ওঠে বুকে তোমার আল্‌তো ফেনা-সই!
ঢেউয়ের ছিটায় মিঠা আঙুল যাচ্ছে ঠোঁটে লেগে!

রে মুসাফের, পাতাল-প্রেতপুরের মরীচিকা
সাগরজলের তলে বুঝি জ্বালিয়ে দেছে শিখা!
তাই কি গেলে ভেঙে হেথায় বালিয়াড়ির বাড়ি!
দিচ্ছ যাযাবরের মতো সাগর-মরু পাড়ি,-
ডাইনে তোমার ডাইনীমায়া, পিছের আকাশ ফিকা!

বাসা তোমার সাতসাগরের ঘূর্ণী হাওয়ার বুকে!
ফুটছে ভাষা কেউটে-ঢেউয়ের ফেনার ফণা ঠুকে!
প্রয়াণ তোমার প্রবালদ্বীপে, পলার মালা গলে
বরুণরানি ফিরছে যেথা, মুক্ত-প্রদীপ জ্বলে!
যেথায় মৌন মীনকুমারীর শঙ্খ ওঠে ফুঁকে।

যেইখানে মূক মায়াবিনীর কাঁকন শুধু বাজে
সাঁজসকালে, ঢেউয়ের তালে, মাঝসাগরের মাঝে!
যায় না জাহাজ যেথায়- নাবিক পায় না নাগাল যার,
লুঘ উদাস পাখায় ভেসে আঁখির তলে তার
ঘুরছে অবুঝ, সে কোন্ সবুজ স্বপন-খোঁজার কাজে!

ওরে কিশোর,- দূর-সোহাগী ঘর-বিরাগী সুখ!
-টুকটুকে কোন্‌ মেঘের পারে ফুটেফুটে কার মুখ
ডাকছে তোদের ডাগর কাঁচা চোখের কাছে তার!
-শাদা শকুনপাখায় যে তাই তুলছে হাহাকার
ফাঁপা ঢেউয়ের চাপা কাঁদন- ফাঁপর-ফাটা বুক!