শালিখ

শীতের সন্ধ্যায় আমি দেখিলাম একটি শালিখ তার বুনিতেছে বাসা
শুধালাম তারে আমি (কারণ, জেনেছি আমি জন্তু কীট পাখিদের ভাষা
বহু দিন মৃত্তিকায় বাস ক’রে, ছবি দেখে নীলিমার ও-পারে নীলের
বহু দিন)- তারে আমি বলিলাম, হে পাখি, কুলায় তুমি বেঁধেছ তো ঢের
মনে হয় দর্শনের ছাত্র তুমি কোনও শেষ দিগন্তের অন্বেষণে;- কীসের পিপাসা
তোমারে তাড়না করে এই সব খড়, তুলো, জীর্ণ পাতা, রোম আর চুল
তুলে নিতে- কোনও কথা বলিল না সেই পাখি- শুধু তারে দেখিলাম গভীর ব্যাকুল

খয়েরি শেমিজ যেন পরেছে সে- হলুদ স্টকিং পায়ে- গলায় নীলাভ কমফর্টার
যেন ঢের কথা জানে- পাখি নয়- আমি নই- অন্য কেউ
মাটির উপর থেকে যে-মই ঠেকেছে গিয়ে দেয়ালে সেইখানে চুপ ক’রে আছে এক ঢেউ
রুমালে রেখেছে বেঁধে যেন গুপ্ত জাদুমন্ত্র: দরকার নাই খুলিবার
‘নগরে বন্দরে তুমি শেখ নি কি আমি যা জেনেছি এই অশ্বত্থের গাছে’
আমারে উপেক্ষা ক’রে বলে পাখি ঘাড়ের উপর দিয়ে কথাগুলো ছুঁড়ে ফেলে যেন
‘হে প্রিয় শালিখ, তুমি আমার উপরে এত উদাসীন কেন’
মাথা হেঁট ক’রে- চঞ্চু তুলে-তুলে- আধাে-উড়ে- ঠোকরায়ে-ঠোকরায়ে- থেমে
কাজ ক’রে গেল তার- মনে হল কোথাকার ভগ্নঅংশ মৃত্তিকার তালপিণ্ডে আসিয়াছে নেমে
স্বাদ যেন পাওয়া যায় কোনও দূর বলয়িত অভগ্নতার
মৃত্যুর? কী, জীবনের?- কুয়াশারা ব’লে গেল, ‘জানিবার নাহি দরকার।’