সে এক শীতের রাতে

সে এক শীতের রাতে- জ্যোৎস্নার রাতে
প্রথম যৌবনে আমি কোনও এক শিকারির সাথে

ক্যাম্পে ছিলাম শুয়ে- আসামের জোকাই জঙ্গলে
রাত কিছু বেশি নয়- জোনাকির নীল কোলাহলে

হৃদয়ে আমার ঘুম আসে না ক’- তাই চুপে ধীরে
ক্যাম্প ছেড়ে এক বার জ্যোৎস্নার অরণ্যের তীরে

দাঁড়ালাম,- দীর্ঘ নাহরগাছে ছেয়ে আছে বন
ছায়া-উপছায়া তার- খেলিতেছে হাওয়ায় কেমন

খেলিতেছে জ্যোৎস্নায়- আকাশে নতুন চাঁদ যেন
কোনও দিন পৃথিবীতে দেখি নাই হেন

হেন চাঁদ;- আকাশ প্রান্তর মেঘ শিশিরের জল
যেন কোন্ রাত্রিচর বাঘিনীর অগণন ইঙ্গিতে উজ্জ্বল

তখন অনেক রাত- ক্যাম্পে ঘুমের গন্ধ… হৃদয়ে আমার
ঘুম নাই- নক্ষত্রেরা নাহরের নীল জানালার

ফাঁকে-ফাঁকে ঘুমায়েছে- ঘুমায়েছে ময়না মুনিয়া
স্তব্ধ রাত; কুয়াশায় জ্যোৎস্নার দূর পথ দিয়া

ভীত এক হরিণেরে আকস্মাৎ দেখা গেল, আহা,
বিশাল বিচিত্র প্রাণ- বনের প্রেমিক সে যে তাহা

সমস্ত আকাশ যেন নক্ষত্রের কোটি চোখ দিয়ে
জেনেছে অনন্তকাল- তুমিও বুঝিতে তাহা, প্রিয়ে,

মরণের ঘুম ভেঙে উঠে এলে,- উঁচু-মাথা গাছের মতন
কুয়াশায় দেখা দিল- সমস্ত বনের আবরণ

পিছে তার- চোখে তার প্রান্তরের হাওয়ার আঘাত
ধারালো ঘাসের বর্শা পায়ে তার- হাড়ভাঙা শিশিরের রাত

বুকে তার;- পিছে তার নাহরের অন্ধকার অরণ্যের থেকে
ছুটিছে রূপসি এক- ক্ষিপ্র দেহ ঢেকে

চিতার বিচিত্র শালে- বিদ্যুতের মতো গতি নিয়ে
জ্যোৎস্নার পথ থেকে ঢুলুঢুলু জ্যোৎস্নার স্বপ্ন-পথ দিয়ে

সুন্দর দুইটি প্রাণ- ক্যাম্পের পাশ দিয়ে ছুটে
গেল তারা
রুপালি চাঁদের গুঁড়ি হরিণের দুই চোখে- চিতাবাঘিনীর পাড়া

মখমল ঘাসে-ঘাসে- শিশিরের রুপার হিরায়
যত দূর চোখ যায়- যত দূর দুই চোখ যায়।