শিশিরের মতো নিরাময়

যেখানেই চ’লে যাই- বন্ধু ভাই বোনদের সাথে
কোথাও পথের বাঁকে- নিকটেই- অপূর্ব বিদায় নিতে হবে
ঘুমন্ত লোষ্ট্রের ‘পরে বাতাসের মতন নীরবে
এক বার (ঢিলটাকে) নেড়ে দেওয়া
তার পর যে যাহার আপনার অন্তরীক্ষে গিয়ে
জরিপের ফিতা, মাইল, তৌলদণ্ড দিয়ে
কী ক’রে গণনা করি বিরহকে আর।

ভোরের স্ফটিক আলো
আলোকের মতো সরলতা
এক দিন চোখে নিয়ে দেখেছি প্রাসাদ এক প’ড়ে আছে
শনি শুক্র বৃহস্পতি নক্ষত্রের মতো উঁচু সূর্যের কাছে
আপনার গরিমায়। দ্বার খোলা। আপামর সিংহদ্বার সব
দিবসের পারে দূর দিবসের নিরন্তর আলো
কক্ষে-কক্ষে। সে-সব প্রাসাদ আজ কোথায় দাঁড়ালো।

আমরা বিদায় নিয়ে চ’লে যাই- নর-নারী- যে যাহার কাছে
তবু সেই বিদায়ের অনুষ্ঠান- চেয়ে দেখ-
দূরতর প্রভাতের আলোকের রীতির মতন

নিজস্ব আলোকে নয়- আলোকের প্রতিবিম্বে
অগণন ভগ্ন অংশে- ভঙ্গির ভিতরে বেঁচে আছে
অতএব শোক করা মিছে।
এখানে বিদায় নেই- অতএব ছেদ নেই কোনও এক সাধু ভূমিকার থেকে ত্যক্ত হয়ে
আমাদের পূর্বপুরুষেরা তবু কেমন হৃদয়ে
বিয়োগের কথা ব’লে গিয়েছিল? অকপট প্রেমিকেরা জানে
বিষুবক্রান্তিতে চুমো খেয়ে ফেলে
মকরক্রান্তিতে তবে কর্কটের মানে।
সে-সব সরল প্রেম প্রেমিকেরা এইখানে নেই
এক- দুই- অগণ্য- ধূসর স্তম্ভ (এইখানে) যে যাহার স্থানে।
চারি-দিকে বালুকার বুকে এসে জ্যোতিষ্মান কঙ্কালের গুঁড়ির নিক্কণ
এখুনি সাধিত হবে- জানে তারা;- এ-রকম জাগরূক তাহাদের মুখ
এক দিন এক জন রয়েছিল এইখানে। এখন সমস্ত জনগণ।

জীবনের সূচনার শেষ হয়ে মৃত্যু হয়ে গেছে- ঢের দিন
খেতে যেই চাষী ফেরে অসমাপ্ত কাজের ভিতরে
প্রতীক সে। পৃথিবীর ও সূর্যের অসম্পূর্ণ মৃত্যুর তরে
নিরন্তর নৃত্যে সে-ও ক্ষুদ্র বিম্ব- আপনাকে সংবরণ করে
সহসা সমাপ্ত হয়ে যেতে-যেতে বৃত্তাভাসে হংসডিম্বে- অর্ধবৃত্তে- থেমে
কখনও সে পূর্ণগ্রহণের মতো নয়
আমাদের পূর্বপুরুষেরা যেই বাতাসের শব্দ শুনেছিল-
একটি বাতাস যেন ব্রহ্মাণ্ডকে ছেপে
মৃত্যুর অনন্য রাজ্যে সে এখন শিশিরের মতো নিরাময়।