শিশু

মায়ের জানুর ‘পরে যেই শিশু খেলা করে অন্ধকার ভোরে
সে কি ফিরে এল নিকট কার্যকারণের দেশ থেকে
কয়েক মুহূর্ত আগে ধবল দাড়িতে মুখ ঢেকে
সে কি এক বুড়ো ছিল- জীবাত্মার পুঁজ ওঠে গলগল ক’রে
অথবা প্রেমিক ছিল- কিংবা এক অদ্ভুত সৈনিক
ফুটন্ত কেটলি যার চোখে লেগে হয়ে যেত হিম
জীবনকে মনে হত সোনালি জঙ্ঘার প্যারাডিম
দাঁতে কুটো গুঁজে দিয়ে যখন সে হত দার্শনিক

শিশুর হিংস্র কান্না, ক্ষোভ, খেদ, কলরোল শুনে মনে হয়
মুকুরে দেখেছে ফের বৃশ্চিক-, কর্কট-, সিংহ-সঙ্কুল জীবন
যা হয়েছে এত দিন;- যতই নিসর্গ তারে করে সম্মোহন
মায়ের কোলের ‘পরে। সাতটি গোভূত এসে দিতে পারে কী আর অভয়
ফুল, পাখি, ছায়া, নদী, আলো ভেবে মূঢ়তাবশত
যতই জননী তারে স্বীকার পেতেছে ভালোবেসে
তবুও সে পুনরবয়বে মিশে গেছে ধারালো কাঁচির এই দেশে
এক জোড়া কান নিয়ে প্রথমত সেই মুণ্ড এই আগুনের মতো।

এই কথা ভুলে গেছে চারি-দিকে পৃথিবীর ভিড়
যৌবন ঠেকিয়ে তবু আর এক মানুষ আজ জানে
জননীর আগুল্ফলম্বিত চুলে- খোঁপার ভিতরে অভিজ্ঞানে
অনেক নিবিড় সুতো রয়ে গেছে- মায়াবীর ববিনের মতন নিবিড়
পেকে যায় সময়ের গভীর নিপুণ হাতযশে
টেবিলে দুধের গ্লাস- সূর্যের আলো উভয়ত
ঘুমায়ে রয়েছে শিশু ক্লান্ত কিংবদন্তির মতো
জন্মেছে সে জননীকে ফাঁকি দিয়ে সগরের অনাদি ঔরসে।