শীতের রাত

শীতের রাত- শীতের গভীর রাত…
আমার জানালার পাশে- মাঠের ভিতরে- দেশি বাদামগাছের অঢেল শাখার কোলে
বাতাসের ভিতর হামাগুড়ি দিয়ে ভেসে এসেছে একটি পেঁচা-
গহন রাত্রির নিথর কঠিনতার ভিতর যেন কোনও সাড়া ছিল না এত ক্ষণ
প্রশ্ন করছিলাম
কোনও উত্তর পাচ্ছিলাম না কোনও দিক থেকে
এত ক্ষণ পরে জীবনের একটা ঢেউ এলো যেন
বাদামগাছের পল্লব কেঁপে উঠল
(ডানার শব্দ শুনলাম)
শিশির ঝরল
হৃদয়ে পেলাম শান্তি
ডানার শব্দ শুনছি
শিশিরমাখা শান্ত ডানার
বাদামের পল্লবের ভিতর অন্ধকার রাতের জিন- মায়াবী
নিজের খেলার ঘর খুঁজে বেড়াচ্ছে
বাদামের ছোট-বড় আঁকাবাঁকা ডাল, তারার আলো, শিশির, ধূসর পালক
এইসব নিয়ে চমৎকার রূপের রহস্য সৃষ্টি হচ্ছে ঐখানে
ঐ নীল আকাশের নিচে
বাদামগাছের শাখায় শিশিরে
নক্ষত্রের হিরে’র গুঁড়ির দেশে
নিস্তব্ধতার লম্বিত ঘোমটার সান্ত্বনায়

এই গাছ শুধু কাঠ নয়
এই পাখিও নয় শুধু পাখি
এদের গভীর আনন্দ ও পরিব্যাপ্তি
এই শীতের রাতকে রূপ দিয়েছে
নক্ষত্রের অসীম হিম ও নির্বিবাদ দূরত্বকে ভেঙে দিয়েছে
আমার জানালার পাশে নিয়ে এসেছে তাদের
আমার মানুষহৃদয়কে অসাড় অন্ধকার কক্ষের থেকে তুলে নিয়ে
(আমাকে) রহস্যময় সিঁড়ির পথ দেখিয়েছে
যেই পথ দিয়ে চলতে-চলতে
বাতাসের ভিতর হামাগুড়ি দিয়ে ভেসে শাখার জানালায় নিজেকে খুঁজে পাই
আঁকাবাঁকা ডালপালার জাল বুনে পাখি ও শিশিরের গল্পের ভিতর হারিয়ে যাই
ছায়াপথ থেকে নক্ষত্রের মতো নেমে এসে
শাখাপ্রশাখা ও পাখির হৃদয়ে আকাশের মতো বিস্তৃত ভূখণ্ড খুঁজে পাই আবার
রহস্যসিঁড়ির আঁকাবাঁকা পথ কখনও শেষ হয় না
শেষ হয় না (আমাদের ঘিরে) অবিরল রূপ ও শান্তির অদৃশ্য নির্জন হাত।