শীতের রাত

আবার শীতের রাত নেমে এল খানিকটা নিরাপদ এই নগরীতে
পৃথিবীর সকল নগরী তবু ঠিক আমাদের মতো নয় এ-রকম শীতে
বাতির আলাপ নেই সারা-রাত- যেন এক বিপরীত পিতার কবলে
ধরা প’ড়ে নিজেকে লুকায়ে রেখে- তবুও লুকাতে চেয়ে
থেকে-থেকে দু’-একটা ভীরু মোম জ্বলে
সেই সব সমুদ্রপারের দূর নাবালক জানালায়, আহা।

অনেক কুকুর তারা মেরে ফেলে দিয়েছে নীরবে
অনেক বিড়াল, পাখি, কাকাতুয়া, ক্যানারি, তিতির-
এ-সবের দিন আছে। আমাদেরও দিন আছে।
তার পর ইহাদের মৃত হতে হয়।
স্বতঃসিদ্ধতায় শুধু আমরাই স্থির।
বাস্তবিক ক্যানারি পাখির-

থামা গেল-
তবুও সে আঙুলের শিষ দিয়ে তুষের আগুন নাড়াচাড়া
দিতে গিয়ে তিন ফুট আঙরার থেকে যেন কতগুলো আকাশের তারা
ঝেড়ে নিল- লক্ষ যুগ আগে তারা ম’রে গেছে সব।
মুহূর্তেই হয়ে গেল পুনরায় পেরেকের মতন নীরব।
ভাঁজ খুলে প’ড়ে যাই বাসি কাগজের সব সম্পাদনাগুলো
চেয়ে দেখি মুখোশের মতো মুখ, এলো-চুল ম্লান পরচুলো।

এখন অনেক রাত হয়তো-বা- গ্রে স্ট্রিট’এ শেষ গণিকারা
চিতা’র চিত্রিত ছালে সমুজ্জ্বল পউষের নীলিমাকে তবে
নগরীর রাতকানা মানুষের তরে একা রেখে
ভেবে দেখে নিজেদেরও নেই কিছু-
পাঁজরের আঁকাবাঁকা প্যারালাল লাইনগুলো ছাড়া
সেইগুলো ওঠাপড়া করে ঘড়ি, ঘড়িহীন- এই সব কথা ভেবে দেখে।

গ্রে স্ট্রিট নও তুমি
আমিও চিনি নি কোনও বার
আমাদের হুকুম রয়েছে আজও আলো জ্বালাবার
সারা-রাত আলো জ্বালাবার
শীত-রাত ব্যবহার করা যায়-
ব্যবহৃত হতে হলে বাবলাগাছের মতো অন্ধকার রাতে
তোমাকে দাঁড়াতে হত এ-রকম? মিরুজি নদীর পারে- নদীটির হাতে
মৃত হরিয়াল নেই- উদবিড়াল’রা সব দার্শনিকদের মতো ঘুরে
জলের ভিতরে স্থির চাঁদটাকে দিল ভেঙেচুরে?

এই সব কথা আজ মনে হয় অন্ধকার রাতে
এই নগরীতে ব’সে একটি কলম নিয়ে হাতে
ধূসর কাগজ ঢের এঁটে দেওয়া হয়েছিল এইখানে দেয়ালের ম্লানতার ‘পরে
হতেছে হলুদ আরও
রয়েছে গুলফ ডুবে চামচের- একটি চায়ের কাপে কারও
এখন অনেক রাত নগরীতে পাঁড়-মাতালের তর্কে- পোলিটিক্স’এ- গণিকার সংসর্গে- ব্ল্যাকআউটহীন
একটি প্রেমের কথা সে-দিনের- মনে হত তবুও স্যাকারিন
তবুও হৃদয়ে এক সুস্থতা- এই সব শীত-রাতে-
শেষ বার কোনও এক সিঁড়ির নিকটে
তাহাকে দাঁড়াতে দেখে- হৃদয়ের ভবিষ্যৎহীন ধর্মঘটে
কাহারও চক্রান্ত নাই কিছু আর।- তবু সেই সিঁড়ির গড়নে কিছু ভুল ছিল
এ-রকম শুদ্ধ হলে ভালো হত সব
একটি ঘুরুনো সিঁড়ি সূর্যালোকে ঘুরে গেছে স্বতঃসিদ্ধতায়
সে বা আমি শীর্ষে চ’ড়ে পেয়েছি নিঃস্বার্থ অনুভব।