সন্ধ্যা হয়ে আসে- সন্ধ্যা হয়ে আসে-
একা-একা মাঠের বাতাসে
ঘুরি আমি- বসি আমি ঘাসে।
ওই দূরে দেখা যায় কার লালপাড়
প্রসাদের বউ বুঝি- পাশে বুঝি তার
প্রসাদ রয়েছে ব’সে- বাড়িতেছে সন্ধ্যার আঁধার
বছর আরেক হ’ল হয়েছিল দু’জনের বিয়ে,
মনে পড়ে; তারপর কুড়িয়ে-বাড়িয়ে
আজও তারা যায় নি হারিয়ে।
রোজই তারা সন্ধ্যা হ’লে আসে
এই মাঠে- ব’সে থাকে ঘাসে
লক্ষ-লক্ষ তারার আকাশে।
ব’সে থাকে- মনে হয়
মাঠের চাঁদের কথা কয়
দু’জনার প্রাণে ঢের শান্তি ও বিস্ময়
আছে আমি জানি
এরা দু’টি পৃথিবীর আঁচলের প্রাণী
মনে কোনও প্রশ্ন নাই- দ্বিধা নাই জানি
প্রাণের আশ্চর্য টান আছে
চিরদিন থাকে কাছে-কাছে
বিচ্ছেদে বিনষ্ট হয় পাছে
জীবনের শান্ত গল্প- প্রসাদ কখনও তাই
বড় বেশি তীর্থে যায় নাই
যদি তারে এ-কথা শুধাই
মৃত্যুরেও দেবে না কি ফাঁকি?
কিন্তু থাক চেয়ে দেখ যেন দু’টি পাখি
ব’সে আছে- পাখনায় শান্ত পাখা ঢাকি
নক্ষত্রও চেয়ে দেখে সব
এমন নিবিড় স্নিগ্ধ- এমন নীরব
ভালোবাসা: মাটিতেও নয় অসম্ভব?
এই তারা বলে
নীল লাল আলো নিয়ে জ্বলে
চেয়ে দেখে আকাশের তলে
রক্তে-রক্তে ভ’রে আছে মানুষের মন
রোম নষ্ট হয়ে গেছে… গেছে বেবিলন
পৃথিবীর সব গল্প কীটের মতন
একদিন ভেঙে যাবে: হয়ে যাবে ধুলো আর ছাই
রোম নাই আজ আর- বেবিলন নাই
আজও তবু হৃদয়ের হৃদয়কে চাই।
‘রূপসী-বাংলা’ খাতা
প্রকাশ: ১৯৮৪