সহসা প্রথম এক দিন

যেইখানে সহসা প্রথম এক দিন
এঞ্জিন এল ব’লে
মানুষের কাছে তাহা ঐশী ব’লে মনে হয়েছিল
সেইখানে আগেকার দিনগুলো কেটে যেত
আত্মা- পরমাত্মার
অন্য এক অনন্য অভ্যাসে
হায়না যেমন ক’রে শেয়ালের শব খায় নদীর কিনারে
ধুলো, কাদা, সপ্ত-ঋষি, অন্ধকারময় সৌর দক্ষিণাবাতাসে
তবুও মানুষ ব’লে নিজেদের টের পায় তারা
তা না হলে হায়না’রা ত্রিপুরারি ঘোষালের আড্ডায় সিদ্ধি খেয়ে
সারা-রাত হাসে?

অদ্ভুত হাসির বিভ্রমে এই যুগসূর্য উঠে এল
হাঙরের মতো ক্রূর মেঘের পঞ্জর থেকে নেমে
অনেক অদন্ত হাসি মিশে গেল একচক্রা দেশে- অন্ধকারে
আমরা গেলাম প’ড়ে সিংহ-অবতার এই সূর্যের প্রেমে
বিস্তীর্ণ শস্যের খেত- মনে হল- দেখেছি কালকে-রাতে- কাহাদের যেন
জমি উপড়ায়ে ফেলে- ভয় পেয়ে-
তরাসে মেঘের মতো চ’লে গেছে চাষা
সেই লুপ্ত স্বাক্ষরে সারা-দিন
উড়িতেছে ভৌতিক বায়ুর ভালোবাসা
গোলাবাড়ি গুমোটের মতো যেন মনে হয়
বনমানুষের হাড়ে ভেল্কি নাই
আত্মারাম যদিও পুষিছে মনে নিষ্ক্রিয় দুরাশা

পিপুলের ডালে ব’সে বঙ্কিম চাঁদের নিচে প্রবীণ জ্যোৎস্নায়
ধানীগন্ধ-পাখা পেঁচা প্রতীকের মতো নয় আর
সে-ও জানে- সে-ও শোনে
বটের খোঁড়লে ব’সে দিবারৌদ্রে পিস্টনের প্রকাশ্য ঝঙ্কার
দিকে-দিকে পতনের শব্দ ছুঁয়ে উত্থিত হতেছে ইতিহাস:
কালো ধোঁয়া- সোনার কলাই-করা বাতি সব- মায়াবীর হংসী’র ডিম
ঝুলিতেছে মাঝশূন্যে- যখন জঙ্গলে ফিরে ভূত হয়ে গেছে সব তিতির, সারস, বুনোহাঁস।

রোটারি-প্রেসের শব্দে- আবার বলিল দীর্ঘ ক্লান্তিহীন বৈশম্পায়ন-
বরং হরফ ছুঁড়ে মেরে দিল- মুহূর্তেই উচ্চারিত হয়ে যাবে এক লক্ষ রিম-
‘শার্ঙ্গদেব, ভরদ্বাজ, মানুষের নব-নব বিচিন্তার কোনও দিন নাই অন্তিম’

সারা-দিন চ’রে-ফিরে দেখিতেছি- ঐ দিকে- যেখানে লাঙ্গল ছিল, শস্য ছিল এক দিন
কিংবা মনের হেঁয়ালি ছিল ইচ্ছাপূর্ণিমার মতো অবোধের বুকে
সেইখানে বৈদান্তিক বন্ধু নাই আজ আর- কিংবা তার দেবী পরি জিন।
সেইখানে এক গাছা ঘাসও নাই- সকল গাভীরা তবে হয়ে গেছে মরুভূর ঘোড়া
দ্বাদশ আদিত্য তবে জ্ব’লে যাবে- ফুটন্ত কটাহে সিদ্ধ হবে মুখচোরা

তবুও তো গ্রীনহাউস এই দিকে- ঐ দিকে- দম্পতির কোলে চ’ড়ে পিকিঙের কুকুরও শৌখিন
নতুন মডেল আসে- স্ট্রিমলাইনড- যত রং আছে পৃথিবীর
মাছরাঙাপাখিদের দিকে চেয়ে সমর্থন কে-বা চায় তার
যত দূর চোখ যায় ডুমুর রয়েছে প’ড়ে প্রত্যাহৃত বুড়ো এক বিমূঢ়ের মতো
পিস্টনে অমোঘ গতি, স্বরপরি, সব-চেয়ে সমীচীন বর্ণের প্রচার
তবুও অনেক মুণ্ড- পাথরের মতো আছে রাস্তায় প’ড়ে
ক্রমবিবর্তনে আজও মানুষের মাংসপেশি পেয়ে গেছে ব’লে
তালি-দেওয়া জামা-গায়ে এই কাজে সেই কাজে উঠিতেছে ন’ড়ে
(কিংবা যাহাদের কোনও কাজ নাই- নিসর্গের পুরস্কার জানে
ট্রেড-ইউনিয়নের চেয়ে আরও ঢের বড়ো অভিযানে
তাহারা মৃত্যুর পরে কাজে হবে রত
ভূতের বেগার যদি বলো তুমি ব’লে যাও
অনেক উর্বর বীজে বোম্বাইয়ের মিল, মহাত্মারা তবু এই বার পেকেছে ফলত

যাহাদের কাজ আছে সময়ের আবর্তনে তারা সব
নর-নারী-বালখিল্য মাংসপেশি পেয়ে গেছে ব’লে)
তাদের মস্তিষ্কে ঘিলু, সুস্বাদু মুড়োর মতো চর্বিত হতে পারে, শার্ঙ্গদেব
যখন অনেক রাতে উঁচু-উঁচু দেয়ালের ঘড়ি’রাও- অদ্ভুত নীরব
যখন চালের বস্তা মহাজনদের পোষা ইঁদুরের অগম্য- সুদূর
যখন আকাশে হাঁস বায়বী বন্দুক তুলে অভিমানে খুঁজে ফেরে শিকারির খচ্চরের খুর
বিশ্রুত দিনের আলো, মকরনির্ঘণ্টময় সমুদ্র-ঘণ্টার শেষ হলে
তাদের মাথায় চর্বি সকরুণ মোম, লাক্ষা, আরণ্য অগ্নিতে যাবে জ্ব’লে।