সকালে ঘুমের থেকে উঠে

সকালে ঘুমের থেকে উঠে আমি চেয়ে দেখি
নীলিমা গিয়েছে ভ’রে অনিবার পাখিদের ডানার আঘাতে
যেন তাহাদের প্রাণে দার্শনিক মানুষের চেয়ে ঢের লঘু মনস্কতা
কী ক’রে তাদের জন্ম হল এই বায়ুলোকে, জানি, তাহা পৃথিবীর ধূম্র এক গোপনীয় কথা

মনে হয়, যারা ফাঁসিকাঠে ঝুলে গেছে- ভূমিকম্পে ম’রে গেছে- পৃথিবীর রণক্ষেত্রে তাদের রুধির
বেদনাকে মানুষের দিন ব’লে গণেছিল- তারা সব সাদা-সাদা ডিম হয়ে গেল সরসীর
নীড়কে জড়ায়ে নিল সিন্ধুপারে- পরিচিত জাহাজের সুদীর্ঘ মাস্তুলে
নীলিমায়- পাহাড়ের দূর সেগুনের বনে
আমার এ-হৃদয়কে মানুষের কাপড়ের সূতা থেকে পালকের মতো ক্ৰমে খুলে
তাহারা প্রোথিত করে জীবনের স্থির অভিমুখ
হিংসুটের বিছানায় যেন কোন মানুষীর মরুভূমি পুড়ে গেছে চির-দিন
বাতাসের জনতায় প্রিয়ের প্রকোষ্ঠ আজ অধিকার করিতেছে
ফুটফুটে ডানার রঙিন নক্ষত্রেরা তার;-
এক দিন কেরোসিন-কুপি-হাতে ছিল যারা নর্দামার কাছে
কানা বলদের মতো যারা নিরুত্তর জীবনের মূঢ় ঘানিগাছে
ঘুরে-ঘুরে চ’লে গেছে;- অনেক জটিল বই নিয়ে যারা দিন-রাত কোকেনের বিষ
পান ক’রে পেঁচা হল- রূপের অন্দরে শুয়ে রোমাঞ্চিত কাঁটা তুলে যাহাদের শিক্ষানবিশি
সজারুর মতো শুধু;- অথবা রানির প্রেম ছুঁচোর মতন ক’রে গিলে গেছে যেই সব গভীর বিবেক
যারা প্রতিহত হয়ে- ঠুলি এঁটে- প্রণয়ের জাফরান মেঘ
মনীষার হাতে যেন ম্লান জলপাই ব’লে ছেড়ে দিল- তাহাদের সকলের প্রবীণ আবেগ
নিদ্রোত্থিত যাত্রীর চারি-পাশে আকস্মাৎ সমুদ্রের মতো
অগণন শুক্ল বস্ত্রে খুলে গেল;- আমারে দেখেছ তুমি, আমারে চেন তো
কবেকার মরণের অন্ধকার কবরের থেকে উঠে পাখিরা বলিতে আছে।