সময়ের ফাঁকে আমি বহু দিন

সময়ের ফাঁকে আমি বহু দিন নগরীর রাজপথে ফিরে
তবুও এসেছি চ’লে সর্বদাই হেমন্ত-ঋতুর দিন চিনে
নাড়ির ভিতরে এক প্রয়োজন বোধ ক’রে পৃথিবীর অপর সকল
মাইলস্টোনে- হেমন্ত-নদীর পাড়ে এসে দাঁড়ায়েছি
তাকায়ে দেখেছি ঘাস দীর্ঘতর হয়ে গেছে মানুষের চেয়ে
ঈষৎ সোনালি রঙে বিকেলের সূর্যের আলোয়
মাথার উপরে নীল- আধো-ফিকে- ধূর্ত আকাশের
সক্রিয়তা রেখে দিয়ে- কী ক’রে এ-সব ঘাসগুলো
নদীর কিনারে থেমে- ন’ড়ে উঠে- উপহাস ক’রে
কোনও এক অবলুপ্ত বৈজন্তিয়ময়ের
পণ্ডিত- মনীষী- কবি- নারী আর গণিকার মতো
জীবনের কাজ নিয়ে ব্যস্ত নয়? জীবনেরই কেউ
নয়। জানি আমি। নদীর ধূসর জলে তাহাদের ছবি
সবিশেষ কিছু নয়। জানি আমি। ইন্দ্রিয়ের নিবিড় হেঁয়ালি
তবুও হৃদয় তৃপ্ত ক’রে রাখে হেমন্তের বেলা
হৃদয়ে জিজ্ঞাসা আসে মন্থর ঢেউয়ের আলোড়নে
পরিদৃশ্যমান এই অববাহিকার পথে ফিরে,
হেমন্তের নদী, বৃক্ষ, পাখি, ঘাস, ঢিলের ভিতরে
রৌদ্রের ছায়ার মতো সহজেই ঢুকে পড়ে, আহা,
নির্জন জলের মতো পুনর্বার বার হয় স্বাভাবিকতায়;
হৃদয়ে জিজ্ঞাসা আসে- আমি কোনও সদুত্তর খুঁজে
পাই না ক’। এইখানে তিত্তিরাজ-গাছের বল্কল
উই কিছু খেয়ে গেছে- হলুদ লিচেনগুলো এসে
কিছুটা ঘিরেছে তাকে- লুপ্ত কাঠঠোকরা’রা কবে
গিয়েছে খোঁড়ল খুঁড়ে- তবুও সমগ্র অবয়ব
এই সব গুনাগার- লোকসান- হয়তো-বা পরিতৃপ্তি নিয়ে
আমার হৃদয়ে এসে দাঁড়াবার মতন জিনিস
কৌটিল্যের চেয়ে আরও অনু এক স্বতন্ত্র গরিমা
আবহে বহন ক’রে- হেমন্ত-নদীর পাড়ে জেগে।
আমি তার ঘ্রাণ পাই- আমি তার কাছে যাই- স্পর্শাতুর হয়ে
তবুও সংশয়ে থেমে- নগরীর গুরু গরীয়ান
বিদূষকদের শ্লেষে গাধা’র মতন কান পেতে
তবু তাকে স্পর্শ করি- তবুও মহানুভব কিছু
নিমেষেই সংঘটিত হয় নাই পৃথিবীর পারে
আমাদের দু’ জনার এ-রকম গোপনীয় অন্তরঙ্গতায়
হেমন্ত তবুও তার অর্থ নিয়ে নদীর শিয়রে
বটের বিবর্ণ ডানার রোমে- তিতিরের রঙে
নিভৃত ডিমের ঘ্রাণে- অসংখ্য চিলের মাঝে একা
ব’সে আছে, মনে হয়- তবুও সে বিবর্তিত সুখে
কোথাও বৃক্ষের জন্ম দিয়ে যায়- কোথাও নদীর-
সূর্যতার- অণ্ডের- আলোর- দীর্ঘ মানুষের মতন ঘাসের-
নগরীর- গম্বুজের নিচে ক্লান্ত নাগরিকদের-
গলির ভিতরে ক্ষুব্ধ গণিকার
দূর- আরও দূরতর মাইক্রোফোনে হিংস্র শ্বাপদের
যেন লক্ষ নিরক্ষর প্রাণের নিকটে
প্যারাডিম সর্বদাই মিশে যায় কুয়াশায়
প্যারাডিমে। আজ এই হেমন্তের নদীর নিকটে এসে বিকেলবেলায়
একটি গাছের সাথে আমার এ-হৃদয়ের অর্গাজম
নতুন অক্ষর এক শিখায়েছে আবার আমাকে
অথবা সে সমধিক পুরাতন ব’লে সে নিজে ভেবেছিল
আমিও শিখেছি তাকে- হয়তো-বা বহু দিন আগে।