সোনালি হেঁয়ালি

আমাদের সুহৃদেরা পীঠ মানমন্দিরগুলো নিজেদের চিনেছিল না-কি?
এত সব সঙ্কল্পের পিছে ফিরে হেমন্তের বেলাবেলি দিন
নির্দোষ আমোদে সাঙ্গ ক’রে ফেলে বারে
চায়ের অকথ্য ক্যান্টিন।

আমাদের নেতাদের উত্তমর্ণদের কাছে প্রতিজ্ঞার শর্ত চেয়ে চারি-দিকে বেড়ে গিয়ে- তবু
তাহাদের খুঁজে পাই ছিমছাম কনুইয়ের ভরে
ব’সে আছে প্রদেশের দূর বিসারিত সব ক্ষমতার লোভে
কোথাও প্রেমিক নেই দীপ্তির ভিতরে

কোথাও সময় নেই আমাদের ঘড়ির আঁতুড়ে
আমাদের স্পর্শাতুর কন্যাদের মন
বিচ্ছৃঙ্খল বিপণির সর্বনাশ হয়ে গেছে জেনে
সপ্রতিভ রূপসির মতো বিচক্ষণ

যে-কোনও রাজার কাজে উৎসাহিত নাগরের তরে;
যে-কোনও ত্বরান্বিত উৎসাহের তরে
পৃথিবীর বারগৃহ ধ’রে তারা উঠে যেতে চায়।
নীরবতা আমাদের ঘরে।

আমাদের শস্যক্ষেতে পৃথিবীর সোনা ফ’লে আছে
পিতাদের দৈব মায়াবলে- মনে হয়
তবুও মৃত্যুর থেকে অপর মৃত্যুর সাথে আজ
তাহাদের কোনও পরিচয়

নেই। ভেবে এই সব ফসলের দিকে
চেয়ে থেকে হতবুদ্ধি হয়ে যেতে ভয়
পাই তবু- আমাদের শস্য আজ অবিকল পরের জিনিস
আমাদের মিডলম্যানদের কাছে পর নয়।

তাহারা চিনায়ে দেয় আমাদের ঘিঞ্জি ভাঁড়ার;
আমাদের প্রৌঢ়দের- তহবিলদারদের- মুখ;
আমাদের মননের বায়ুকুণ্ড লোভাতুর জিনিসগুলোকে-
আমাদের দাগীদের সভাকবিদের মতন কৌতুক।

আকাশে কোথাও কোনও স্পষ্ট সরকার খাজাঞ্চির কালিমার রেখা নেই
রাজপথে থেকে-থেকে বেড়ে ওঠে মূঢ় নিঃশব্দতা
এর ওর দিবারৌদ্রে মৃত্যু হয়ে গেল
অনুভব ক’রে তবু কাউকে বলে না কেউ কথা

বিকেলে গা ঘেঁষে সব নিচু তেজ সরজমিনে ব’সে
মূর্খ, দালাল, ভাঁড়, বেহেড মাথারা সব চেয়ে থাকে সূর্যাস্তের পানে
খালি মনে হয় জানাজানি হলে
কত ধান হয়, কত চাল হয় কেউ কি তা জানে?

ভাবে তারা খুঁজেছিল, খুঁড়ে বিমোহিত হয়ে সিকি-পৃথিবীর যত ধানে
ভেনে নিয়ে খেয়ে ফেলে নরকের থেকে পাপীতাপীদের গালাগালি
সরায়ে মহান সিংহ- অনুভাবনায় স্নিগ্ধ হয়ে
সূর্যাস্তে যত ক্ষণ ছিল যাকে তাকে পুনরায় মনে হয়েছিল সোনালি হেঁয়ালি।


কবিতাটি পরিবর্তিত হবার আগে:

আমাদের যুবকেরা নিজেদের হৃদয় চেনে না
এই সেই সঙ্কল্পের পিছে ফিরে হেমন্তের বেলাবেলি দিন
নির্দোষ আমোদে নষ্ট ক’রে ফেলে অবশেষে মাঠের ভিতরে
আমাদের পিতামহ, পিতা, মাতা আজ অনভিজ্ঞ মৃত্যুতে বিলীন।

আমাদের কন্যাদের কাছ থেকে প্রতিজ্ঞার শর্ত চেয়ে- তবু
তাহাদের খুঁজে পাই ছিমছাম কনুইয়ের ভরে
ব’সে আছে পৃথিবীর দূর বিসারিত সব ক্ষমতার লোভে
কোথাও প্রেমিক নেই দেশের ভিতরে
কোথাও সময় নেই আমাদের ঘড়ির ভিতরে

আমাদের স্পর্শাতুর কন্যাদের মন
বিচ্ছৃঙ্খল বারিকের সর্বনাশ হয়ে গেছে জেনে
সপ্রতিভ রূপসির মতো বিচক্ষণ
যে-কোনও রাজার কাজে সমুত্তীর্ণ নাগরের তরে;
যে-কোনও ত্বরান্বিত উৎসাহের তরে
পৃথিবীর বারগৃহ ধ’রে তারা উঠে যেতে চায়
নীরবতা আমাদের ঘরে।

আমাদের শস্যক্ষেতে পৃথিবীর সোনা ফ’লে আছে
পিতাদের দৈব মায়াবলে- মনে হয়
তবুও মৃত্যুর থেকে অপর মৃত্যুর সাথে আজ
তাহাদের কোনও পরিচয়

নেই। অথবা নিষ্কম্প চোখে সেই সব ফসলের দিকে
চেয়ে থেকে হতবুদ্ধি হয়ে যেতে ভয়
পেয়ে যাই- আমাদের শস্য আজ অবিকল পরের জিনিস
আমাদের মধ্যবর্তীদের কাছে পর নয়

তাহারা চিনায়ে দেয় আমাদের নিঘৃণ ভাঁড়ার;
আমাদের কন্যাদের লোভাতুর মুখ;
আমাদের মননের বায়ুকুণ্ড লোভাতুর জিনিসগুলোকে-
আমাদের ছেলেদের সভাকবিদের মতন কৌতুক।

আকাশে কোথাও কোনও স্পষ্ট সরকার খাজাঞ্চির কালিমার রেখা নেই
রাজপথে থেকে-থেকে বেড়ে ওঠে মূঢ় নিঃশব্দতা
এর ওর দিবারৌদ্রে মৃত্যু হয়ে গেল
অনুভব ক’রে তবু কাউকে বলে না কেউ কথা

অপরাহ্নে পরস্পর রুগ্ন সারসের মতো ব’সে
মূর্খ, মানুষ, ভাঁড় চেয়ে থাকে সূর্যাস্তের পানে
কিছু আছে। না হলে প্রতিটি দিন উপতিত, স্পষ্ট জনতায়
জীবন ও শতাব্দীর মানে

বোঝা যেত। যে-রকম অপরেরা অনুভব করে নি কখনও
তবুও সময়, মৃত্যু, নরকের থেকে পাপীতাপীদের গালাগালি
ভেদ ক’রে বড় বাঘ আসে যায়- অনুকম্পায় স্নিগ্ধ হয়ে
সূর্যাস্তের রঙে তাকে পুনরায় মনে হয় সোনালি হেঁয়ালি।