সরাই-সমাজ

বাতাবি-লেবুর পাতা উড়ে আসে টেবিলের পারে
শার্সিতে ধীরে-ধীরে জলতরঙ্গের শব্দ বাজে
এক মুঠো উড্ডীন ধুলোয় আজ সময়ের আশকারা রয়েছে
কোথাও জীবন নেই ব’লে তবু মৃত্যু নেই আমাদের সরাই-সমাজে

বাইরে রৌদ্রের ঋতু বছরের মতো আজ ফুরায়ে গিয়েছে
হোক না তা; নিসর্গ নিজের মনোভাব নিয়ে অতীব প্রবীণ;
হিসেবে বিষম সত্য রয়ে গেছে কোনও দিন তার-
গভীর বৃষ্টির বোলে বেজে ওঠে করোগেট টিন

তা হলে আষাঢ় এল গরিবের
তা হলে শ্রাবণ এল গরিবের তরে
তা হলে ভাদ্র এল ততোধিক গরিবের তরে
ভাবি তবু আমাদের পুরোনো এ-গ্রহে এবং নির্মল ভেষজে

আজকে গোধূলিসন্ধি তবু কেটে যাক- আমাদের চার জনে মিলে
নতুন চালানি মাল বিলম্বিত ঢের দিন পুরাতন গ্রহে
জেনে ক’রে যায় বাস গোলা বা মনস্বীরা- মানুষের দল
কথা ভেবে কখনও-বা ঠান্ডা আগ্রহে

কখনও-বা উষ্ণতার বাইরে আছি- মাথার উপরে ছাদ চিড় খেয়ে হাসে
মাটির তরঙ্গ ঘুরে মানুষেরা অর্থ টেনে নেয় দু’ পায়ের নিচে
নিজের প্রকৃতি-গুণে ধ্ব’সে যায়- চারি-দিকে কামাতুর ব্যক্তিরা বলে:
এ-রকম রিপু অধোমুখে ক’রে বেঁচে থাকা মিছে।

নতুন ভূমিকা আছে কোনও দিকে- কোথাও নবীন আশা রয়ে গেছে ভেবে
নীলিমার প্রতিকল্পে আজ যারা খেটে সারা হল দিন-মান
নিপট উৎসাহ পায় তারা সব নিজেদের গভীর বিনয়ে
যদিও বর্গী রুখে খেতে চায় তাহাদের হৃদয়াভিমান

তবু তারা পৃথিবীতে প্রথম ও শেষ মানুষের মতো এসে
সঙ্কল্পের পরাভব দেখে গেছে মনে ভাবে যদি-
তা হলে আবার তারা শতায়ু জীবন নিয়ে এসে
আর-একটি শতাব্দীর শুরু থেকে সীমানা অবধি

দেখে যাবে- এইখানে পরাশ্রয়ে ব’সে থেকে আমরা ক’ জন
পুরোনো কাঠের এক লবেজান টেবিলের পাশে
মায়াবীর মুদ্রায় দর-দাম দিতে গিয়ে মঞ্চ-মথিত হয়ে উঠে
টেরি কেটে বেঁচে থাকি ছবির মতন তার তাসে

আমরা মরি নি তবু- অপরে বা- নীলিমার মতো মায়াজালে
অন্ধকার ঘোর পেয়ে মানবের ভিজে হৃদয়ের সাথে কানামাছি
খেলে গেল- উত্তর প্রজাতি রতি শেষ ক’রে উপনিষদের
শূন্যে মিলালো মার, গন্ধর্ব, রাক্ষস সবই, উলুপী, ঘৃতাচী

মৃত্তিকার শেষ সত্য দিয়ে গড়া হয়েছিল মানুষের শরীরের ধুলো
আবার মনন ছুঁয়ে হতে চায় পূর্ণাকার অন্ধকার- তেমনই অমর দীপ্তি রয়ে গেছে তাতে
অন্ধতার মানে সে নির্মল চায়, জ্ঞান হয়ে প্রেম, এই চৈতালী সকালবেলা দেখা দেবে জানি
ডান হাত ভেঙে দেবে। কে জানে তবুও কোন রহস্য বাঁ হাতে।