সর্বদা দুপুর-রাতে

সর্বদা দুপুর-রাতে বার হয়ে দেখা যায়-
সুন্দর অদূরবর্তী শুক্র’র আলোয়
কোথাও চিতা’র শালে দেহ ঢেকে যেন এক মনস্বিনী নারী
আকাশের লোল পথে স্থির এক প্রতীকের মতো

তবু সে সান্ত্বনা কার হৃদয়ের তরে?
আমার ঘুমের চোখ ফুটপাথ থেকে দূর ফুটপাথে
ফাল্গুনের হাওয়ার ভিতরে লঘু কাপাস-ফুলের মতো ভেসে
কোনও এক প্রস্ফুরিত আকাশকে পেতে চায়
হয়তো-বা ঘুম চায় আর-এক বার
মৃত্যু চায়;- মনে হয় আমার চোখের পথে সব স্লাম, সমস্ত পৃথিবী
অভিভূত সমুদ্রের মতো ক্রমে শব্দ করে যদিও এখন
স্থিরতর প্রতিভায়- দিনের আলোর চেয়ে তবু এই ধ্বনি
আরও বড়ো, অর্থহীন- আরও শূন্য মির্মিরের মতো।
প্রবীণ পরিধি যেন অনেক প্রয়াস করে- তবু
আজও রাতে হয়ে আছে সুন্দর, অথর্ব, কেন্দ্রহীন।

কোথাও নেই ক’ যেন নাম- যেন- শিশুদের অনুধ্যানে রূপ
প্রান্তরে ঘাসের ফুল থেকে তার বিভা
শুদ্ধ ক’রে নিয়ে গেছে ঢের দিন
অনেক দৈত্যের মতো চারি-দিকে মিনারের রাশি
(অবৈধ অদৃশ্য সব পরিদের দিকে চেয়ে এই সব গম্বুজ, খিলান
কোথাও রুচির সামগ্রী তবু পায় না ক’ আজ রাতে আর)
এই আধো-অন্ধকারে নিজেদের হৃদয়ের ‘পরে ক্লান্ত হাত
তুলে রেখে জানে তারা- প্লিওসিন;- (মূঢ় সার্থবাহদের মতো)
পৃথিবীকে টেনে নেয় রক্ত- পীত- সমুদ্রের দিকে।
(আমারই মনের ভাবনা সব, আহা)
দাঁড়ায়ে রয়েছে তারা উঁচু, কালো, সারাৎসার পাথরের
মহান ঈর্ষার মতো নিজের অনন্য মহিমায়
আমার চিন্তার থেকে এক বার নতুন, অলীক জন্ম নিয়ে তারা
বৈশাখের আকাশের সদ্যঃপাতি বিদ্যুতের মতো কেঁদে উঠে
নিভে যায় নিরেট পাথরে স্থির, গুরুতর মুখের মতন

শিমুল-বীথির থেকে- অন্ধকারে- নিষ্কাশিত ফুলের মতন
ফাল্গুন-হাওয়ার ঘায়ে আপনার জননীকে ছেড়ে
সময়ের ঘড়ি ঘোরে; মাটির উপরে তার মৃত্যু নাই
পরিষ্কার, পরিধেয় আকাশেও
সাটিনের অবিকল নীলাভ নির্জন পরিহাস
অদিতি’র । লক্ষ নক্ষত্রের মুখ পিতলের মতন উজ্জ্বল
গ্লানিহীন কাকলি পাখির। নিচে পৃথিবীতে কালো, ক্লান্ত বিড়ালের
পশমের মতন থাবায় কোনও ক্রীড়া নাই
আহা, আত্মক্রীড় ভূত! অভ্রান্ত, অজ্ঞাত এক সমবায়
আশ্চর্য স্পর্শের স্বাদ তুলে নিয়ে চ’লে গেছে
সাধারণ অনুভূতি থেকে
যারা ঘুম, যারা মৃত্যু: তারা ঘুম।
আমি সচেতন, তবু বৃক্ষ গাছ যুগ
প্রিয়তম মনীষীর হাতে হাত: অশরীরী হাওয়ার মতন।