স্থবির গভীর এক মনীষীর কথা

স্থবির গভীর এক মনীষীর কথা আমি জানি
সর্বদাই মৃত্যুর ও-পারের আলো
আমাদের এই সব দৈনিক আমাদের চেয়ে
মনে হত ঢের বেশি ভালো
তাই সে বইয়ের পরে বই লিখে গিয়ে
রয়ালটি ব্যাঙ্কে ছড়ায়ে
ভেড়া’কে স্বর্গে তুলে- ছাগল’কে পাতালে নামিয়ে
বাটখারা ঠিক রেখেছিল টায়ে-টায়ে
আজীবন বই লিখে এ-রকম সুনিপুণ হয়েছিল চিন্তার ধার
অ্যান্টিক কাগজের গ্রন্থে তার আনকোরা পেপার-কাটার।

জীবনের সব চেয়ে বড়ো নেশা বইয়ের ভিতরে
খুঁজে পেয়ে (অবসরে)- আড়চোখে চারি-দিকে চেয়ে
নিজের কলম দিয়ে লেখা বইগুলো
ভারতীয় মায়াবীর দড়ির মতন, দড়ি বেয়ে
কোথাও দেখায়ে গেছে অপরূপ খেলা
সকলেই চোখ চেয়ে দেখেছিল সব
তার পর গ্রন্থকার টেবিলে একেলা
চোখ বুজে বিষয়কে ক’রে অনুভব
ভারতীয় মায়াবীর দড়িটিকে গোল ক’রে রেখে দেয় গাধা’র গলায়
(কলম নতুন ক’রে বই লিখে যায় পুনরায়)
রেখে দিয়ে- অবশেষে, বাস্তবিক, বই লিখে যায়।

নদীর ভিতর থেকে জন্মে তবু যে-মানুষ স্থির ক’রে রাখে
কোম্পানি ও অ্যান্টিক কাগজের বিষম রগড়
সকলের ক’রে খেতে হয় বটে- তবু
ব্রহ্মা পৃথক ক’রে তাকে কিছু দেয় অবসর
ভোরবেলা জেগে উঠে সকলেই শ্রেণি বার করে
সে তবু টঙের ‘পরে- জ্যোৎস্নায়;- পেচকের মতো সমীচীন
সে তবু টঙের ‘পরে- টেবিলের ‘পরে
নিজের বিশেষ কাজে হয়ে থাকে অপরের মতন মলিন
যাতে কেউ এসে তার চোয়ালের গোড়তোলা হাড়ে
ঘড়ি ধ’রে একটি ঘণ্টা কেঁদে- হেসে যেতে পারে।

সব অবসর পেয়ে গিয়ে অবশেষে টেবিলেরই কাছে
আপনার ডিমনের সাথে তার হয়েছিল দেখা
ধবল কাগজে শুধু লিখে যেতে ভালো লেগেছিল
ছাপাখানাদের ভূত সংশোধিত ক’রে নিলে লেখা
কাঁচের গেলাসে জলে রোদের মতন
মানুষের অবিকল মেহগেনি টেবিলের ‘পরে
এ-বিষয়- সে-বিষয়- অপর বিষয় নিয়ে লেখকের মন
শফরীর মতো নড়েচড়ে
রাজনীতি- অর্থনীতি- লোকশিক্ষা- ছেলেদের বই- কাম- বড়ো’র কবিতা
(অগণ্য ডিমের গল্প ব’লে ঈর্ষা ক’রে- লোকপিতামহ- একটি ডিমের শুধু পিতা)
অগণ্য ডিমের গল্প ছড়ালেও- আগামী ঋতুর প্যারাডিমে আছে সীতা।

তাই সে মহৎ ক’রে ছেলেদের বৈজ্ঞানিক হল
অথবা বইয়ের কিছু ভবিষ্যৎ আছে ব’লে তাহাতেই হাত
নীরবে পাকায়ে নিল- (পুনরায়)- অসম্ভব অবসর নিয়ে
এ-রকম নির্জনতা- অবসর- নিসর্গ ও নক্ষত্রের ধাত
গভীর বিশ্বাস নিয়ে- (তবুও সে)- সমস্যার পথে
এনেছিল তবুও সে সমীচীন- স্বাধীন দুয়ার
এত সব করেছিল ব’লে এক তৌলদণ্ডে লেখকের মোটা মতামতে
বিবাহিত রমণীকে (মাঝে-মাঝে) মনে হত (যেন এক) আইবুড়ো ঘটকের জার
রোগের বিছানা থেকে দেখেছিল মাঝে-মাঝে ও-পারের আলো উসকায়ে
কলম তবুও কার পিছে প’ড়ে থাকে একা ভিজে বিড়ালের মতো গায়ে।