স্ট্র্যাণ্ডে

গরমের দুপুরবেলা
স্ট্র্যাণ্ড রোডে দাঁড়িয়ে আছি
গঙ্গা এত কাছে
তবুও গঙ্গা কত দূরে
কত শেকল কলকব্জা বল্টু ধোঁয়া ধূলা আইন অর্ডিন্যান্স
আমাদের দু’জনার মাঝখানে
লরি এখানে প্রবল- লরি ট্রাক ট্রাম ফ্যাক্টরি এবং এদের দেবতারা
এদের দেবতারা

নদী এখানে ট্রামের লাইনের মতো যেন
কিম্বা টেলিগ্রাফের তারের মতো
টেলিফোনের তারের মতো
নদীকে এখানে কে কবে দেখেছে?
কিন্তু পৃথিবীর সব নদী
সব সমুদ্র
সমস্তই
ক্রমে-ক্রমে এমন হয়ে যাচ্ছে

টেলিফোনের তারের মতো হয়ে যাচ্ছে
বেল্টে ছাতা গুঁজে ট্র্যাফিক পুলিশ
ব্যাটন হাতে সার্জেন্ট
চারিদিককার ট্র্যাফিকের সমুদ্রের ভিতর
সমস্ত হাঙরগুলোর দিকে নজর রাখছে
এই মহিষের গাড়িগুলের দিকে- গাড়োয়ানদের দিকে-
কাঁচা চামড়া- বস্তা- পাটের পাহাড়ের দিকে
কিন্তু মাল-টানা মহিষের চোখের দিকে
এক বারও তারা ফিরে তাকায় না
চোখের রক্তের দিকে
রক্তের ওপর মাছির দিকে
মহিষের মুখের ফেনার দিকে
তাকিয়ে দেখবার মতো কিছু নেই
এক মুহূর্তের জন্যও
স্ট্র্যাণ্ডের একটি লোকও
এই সবের দিকে ফিরে তাকায় না!
কেন তাকায় না?
কেন?

অনেক ক্ষণ ধ’রে ভাবি আমি
স্ট্র্যাণ্ডে এই মহিষগুলোই কি সব-চেয়ে বেশি দেখবার জিনিস নয়?
এই মহিষদের প্রবল আকর্ষণ আমি এড়াতে পারি না
বার-বার এদের লোমশূন্য চামড়ার দিকে তাকিয়ে দেখি
কেমন ধূসর ভঁয়সা রঙের চামড়া- সিচড়ে কাদায় ল্যাটপ্যাট করছে
চামড়ার ওপরে চাবুকের অজস্র ক্ষতের দাগ
দুপুরের রোদে আগুন চামড়া
অকর্মণ্য নিরীহ ফোঁপরা শিং
বাদামি গভীর চোখ
ভীরু বড়ো-বড়ো চোখ
পাকা পিয়ালের মতো- জল-ভরা
পিচুটি-ভরা
চোখের উপরে মাছি-

এই সবের দিকে তাকিয়ে দেখি আমি

স্ট্র্যাণ্ডের একটি লোকও
এ-সবের ভিতর দেখবার মতো কিছু আছে ব’লে মনে করে না,
এক দিনও
এক মুহূর্তের জন্যও মনে করে নি!