সূর্য অস্ত যায়

অইখানে সূর্য অস্ত যায় শ্যাময়ের মাথার মতন
অবশেষে ঘুম তার এল ব’লে- তবুও যে বিচক্ষণ চোখ
পৃথিবীকে দেখে নেয় একবার এইখানে প্রান্তরের ‘পর
আমারও হৃদয়ে জাগে: জীবনের জন্মদিন থেকে
আজ এতদূর- সূর্যের আলোক।

সেইসব অবিনাশ যোদ্ধাদের রূঢ় হৈমন্তিক
সন্তানেরা- মেধাবী রোমের ঘ্রাণে চিলের মতন
উড়েছে আমার সাথে- মনে পড়ে তাহাদের দীর্ঘ জ্যামিতিক
ডানার তরঙ্গ কথা- একদিন ছিল এই পৃথিবীর অন্তরের ধন।

সেইদিন শিকারীর ছিটে গুলি ছিল যেন কলমের মতো
লিখিত তুলটপাতে যেন সব বিষণ্ণ আঁচড়
তারপর ম’রে যেত;- মেঘের গম্বুজগুলো
আমাদের তরে রেখে
বুদ্ধের প্যাগোডা থেকে শোনা যেত দু-একটা
পোষা হাড়গিলাদের স্বর
নদীদের ইস্পাত উজ্জ্বল জলে মকর, শুশুক
জনরব আরও ঢের দিয়েছিল- তবু মোরা
পারশির নীরব মিনারে

আলাপি চিলের মতো কয়েকটি ঘষিতাম কঠিন চিবুক
মৃত্যুর ছায়ার সাথে- এ পৃথিবী মরণকে
করে নাই তখনও স্বীকার
আজও কে স্বীকার করে?- আমরাও দস্যু-সুকঠিন
কলরবে হাড়ের ভিতর থেকে বার করে ফিরিতাম
রৌদ্রের হাড়
মেধাবী নারীর হাসি;- যদিও হৃদয়ে তার বেদনার ঋণ
আবার নবীন গ্রন্থে গুণ ধরে যে সেইসব পাণ্ডুলিপিরাশি
রয়েছে আমার কাছে গভীর দেরাজে
যেন বীজ- পড়ে যাবে মাটির ভিতরে লোল, লোম, মাটি
শীতের কুয়াশা দেখে দু’-চারটে টেকসই ফুলের প্রত্যাশী।

সেই নারী আমাদের তরে মৃত্যু গ’ড়ে গেছে; মরণ-ইতর রৌদ্র।
সৌর পরিবার আজও কোনও দূর কৃষকের স্বপ্ন আকর্ষণ।
অনুভব করে- তাই শৃঙ্খলার ঘণ্টা তার বাজে সমুজ্জ্বল
চারিদিকে রুক্ষ্ম বন্দরের ধোঁয়া- সাম্রাজ্য চালাতে আছে
রক্তবীজ ধুম্রলোচন।

এই মাঠে কয়েকটি নেউল-ধূসর উঁচু খাল
আজও আছে
পনিরের মতো ঘ্রাণ- অন্ধকারে- তাহাদের বুকে
নদীর ইস্পাত জল- কয়েকটা রাজহাঁস মেঘের খনির
আলো লুফে ফেলে দিয়ে
ধীরে-ধীরে দাঁড়াতেছে যেন মৃত সম্রাটের অগ্নির সমুখে

এখানে অনেক কাজ সমাহিত হয়ে গেছে- প্রকট জরার দাঁত ভেঙে
আজও তবু বিলয় ত্রিপীটক কাছে; মনে হয় মৃত হংস
দম্পতির শেষ স্বর্ণ ডিম হাতে নিয়ে
ওই সব সম্মুখীন পর্বতের কর্কশ লাস্যের দিকে যারা
চলিতেছে;- আমাদের পাঁজরের থেকে তেল চাকার
মতন যেন তাদের চালিয়ে
নিয়ে গেল; আমাদের হৃদয়ের থেকে যেই
জ্যামিতিক তরঙ্গের রেখা
আঁকাবাঁকা শক্ত পর্বতের ক্ষোভ হয় নাই- শঙ্খচিল পাখি
হয়েছিল;- এইসব মৃত সেনানীর দেশে চলিবার আগে
দেরাজে কি রেখে দেব?- অথবা গভীর নীলে
দিয়েছে যে ফাঁকি।

সেই পাখি আমাদের তরে মৃত্যু গড়ে গেছে।