সূর্যপ্রতিম

আমরণ কেবলই বিপন্ন হ’য়ে চ’লে
তার পর যে বিপদ আসে- জানি
হৃদয়ঙ্গম করার জিনিস;
এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।
বালুচরে নদীটির জল ঝরে,
খেলে যায় সূর্যের ঝিলিক,
মাছরাঙা ঝিক্‌মিক্‌ ক’রে উড়ে যায়;
মৃত্যু আর করুণার দু’টো তলোয়ার আড়াআড়ি
গ’ড়ে ভেঙে নিতে চায় এই সব সাঁকো ঘর বাড়ি;
নিজেদের নিশিত আকাশ ঘিরে থাকে।

এ-রকম হয়েছে অনেক দিনই- রৌদ্রে বাতাসে,
যারা সব দেখেছিল-
যারা ভালোবেসেছিল এই সব- তারা
সময়ের সুবিধায় নিলেমে বিকিয়ে গেছে আজ।
তারা নেই।
এসো আমরা যে যার কাছে- যে যার যুগের কাছে সব
সত্য হ’য়ে প্রতিভাত হ’য়ে উঠি।
নব পৃথিবীকে পেতে সময় চলেছে?
হে অবাচী, হে উদীচী, কোথাও পাখির শব্দ শুনি;
কোথাও সূর্যের ভোর র’য়ে গেছে ব’লে মনে হয়!
মরণকে নয় শুধু-
মরণসিন্ধুর দিকে অগ্রসর হ’য়ে
যা-কিছু দেখার আছে
আমরাও দেখে গেছি;
ভুলে গেছি, স্মরণে রেখেছি।
পৃথিবীর বালি রক্ত কালিমার কাছে তার পর
আমরা খারিজ হ’য়ে দোটানার
অন্ধকারে তবুও তো
চক্ষুস্থির রেখে
গণিকাকে দেখায়েছি ফাঁদ;
প্রেমিককে শিখায়েছি ফাঁকির কৌশল।
শেখাই নি?

শতাব্দী আবেশে অস্তে চ’লে যায়:
বিপ্লবী কি স্বর্ণ জমায়।
আকণ্ঠ মরণে ডুবে চির-দিন
প্রেমিক কি উপভোগ ক’রে যায়
স্নিগ্ধ সার্থবাহদের ঋণ।
তবে এই অলক্ষিতে কোন্‌খানে জীবনের আশ্বাস রয়েছে।
আমরা অপেক্ষাতুর;
চাঁদের ওঠার আগে কালো সাগরের
মাইলের পরে আরও অন্ধকার ডাইনী মাইলের
পাড়ি দেওয়া পাখিদের মতো
নক্ষত্রের জ্যোৎস্নায় জোগান দিয়ে ভেসে
এ-অনন্ত প্রতিপদে তবু
চাঁদ ভুলে উড়ে যাওয়া চাই,
উড়ে যেতে চাই।

পিছনের ঢেউগুলো প্রতারণা ক’রে ভেসে গেছে;
সামনের অভিভূত অন্তহীন সমুদ্রের মতন এসেছে;
লবণাক্ত পালকের ডানায় কাতর
ঝাপ্‌টার মতো ভেঙে বিশ্বাসহন্তার মতো কেউ
সমুদ্রের অন্ধকার পথে প’ড়ে আছে।
মৃত্যু আজীবন অগণন হ’লো, তবু
এ-রকমই হবে।

‘কেবলই ব্যাক্তির- ব্যক্তির মৃত্যু শেষ ক’রে দিয়ে আজ
আমরাও ম’রে গেছি সব’-
দলিলে না ম’রে তবু এ-রকম মৃত্যু অনুভব
ক’রে তারা হৃদয়বিহীনভাবে ব্যাপ্ত ইতিহাস
সাঙ্গ ক’রে দিতে চেয়ে যতদূর মানুষের প্রাণ
অতীতে ম্লানায়মান হ’য়ে গেছে সেই সীমা ঘিরে
জেগে ওঠে ঊনিশশো তেতাল্লিশ, চুয়াল্লিশ, অনন্তের
অফুরন্ত রৌদ্রের তিমিরে।

চতুরঙ্গ। আশ্বিন ১৩৫১