টেবিলে অনেক বই

এই বার চিন্তা স্থির করবার অবসর এসেছে জীবনে
হৃদয় বয়স্ক হল ঢের;
মোম জ্ব’লে নিভে যায় অনেক গভীর রাত হ’লে
অন্ধকারে এক-আধটা আবছা ইঁদুরের
আসা-যাওয়া টের পাই ঘরের মেঝেয়
হয়তো-বা সিলিঙের ‘পরে
বাইরে শিশির ঝরে কুয়াশায়- শীতে
লক্ষ্মীপেঁচার ডানা সজনের ডালে শব্দ করে।

টেবিলে অনেক বই ছড়িয়ে রয়েছে;
চিন্তাগুলো যেন অনুলোম-প্রতিলোম
পরস্পরের প্রতি- ঠাণ্ডা সাদা নারীর মতন
দাঁড়িয়ে রয়েছে চুপে মোম-
একটি গভীর সূত্রে গ্রথিত কি হবে
বইয়ের সকল চিন্তা জীবনের সব অভিজ্ঞতা?
সকল নক্ষত্র আর সময়ের অপার গতির
ইতিহাসবৃত্তান্তের আগাগোড়া কথা?

এ-সব আশ্চর্য তত্ত্ব ভেবে তবু মন
অনুভব করে এই অন্ধকার ঘরে আজ কেউ
নেই, শুধু এক বিন্দু মূল্য নির্ণয়ের চেষ্টা ছাড়া।
কোনও এক দূর মহাসাগরের ঢেউ
এসে এই অন্ধকার বন্দর স্পর্শ ক’রে চুপে
কোন্ এক দূর দিকে চ’লে যায়, তবে
সময়ের অন্তিম সঞ্চয়ে প্রেম-করুণার বলয় রয়েছে?
ব্যক্তির ও মানবের সফলতা হবে?

হয়তো এ-ব্রহ্মাণ্ডের অবিনাশ অন্ধকার ছাড়া
মানুষের ভবিষ্যতে কিছু নেই আর;
সেবা ক্ষমা স্নিগ্ধতা যে আলোর মতন
মানুষের হাতে, তা বুঝে-যাওয়া অন্ধ আধার
বার-বার বড়ো এক পরিবর্তনীয়তার দিকে
যেতে চায়- সনাতন অন্ধকারে এ-প্রয়াস ভালো;
তবু এই পৃথিবীতে প্রেমের গভীর গল্প আছে।
জীবনে রয়েছে তার অপরূপ প্রতিভাত আলো।

কার্তিক ১৩৮৬