তার-যে বয়স কত

তার-যে বয়স কত জানে না এ-পৃথিবীর পাথর ও গাছ
আকাশে সারসগুলো অথবা নদীর জলে মাছ
সে আছে এ-কথা তারা অনুভব ক’রে নিয়ে মাঝে-মাঝে উঁকি দিয়ে দেখে
তিন কোণ, চার কোণ, গোল, অবলঙ্ দৃষ্টি থেকে
তবুও দেখে না কিছু; একটি সূর্যের মতো রয়েছে সে পেকে
কোনও এক স্থিরতর- দূরতর সমতল পার হয়ে গেলে
সেই মালভূমি আছে নীরব চেনার-গাছে আকাশে মেঘের ‘পরে হেলে
সেইখানে যেখানে সে দেখা দেয় বোধ ক’রে আমি বহু দিন
বিকেলে সূর্যের রঙে হয়ে যেতে চেয়েছি বিলীন
শ্রুত জীবাণুর মতো সৌর রঙে জেগে উঠে- রঙ্ ছেড়ে দিয়ে
কুকুরের বিড়ালের মানুষের চক্ষু ভঁড়িয়ে
অন্য বিকেলের দেশে- অনন্য ধীতির দেশে সেই
যখন ঘড়িতে রাত ঢের বেশি- পৃথিবীতে আর ঘড়ি নেই
একটি বাতাস এসে ডেকে গেল সারসকে: ‘এখন সেখানে
সাধারণ রোদে উঁচু, ঋজু গাছ বিকেলবেলার সাদা উদ্যমের পানে
চেয়ে আছে’- মৃত্যুর ও জন্মের মাঝে দেখি আমি লাল, নীল আলো
মূর্খ ও মুনির তর্ক গুনে-গুনে হয়ে গেছে অতীব ঘোরালো
আমাদের পৃথিবীতে- যদি কেউ বলে ‘আমি শান্তি চাই, শান্তি এত কম’
প্রত্যুত্তর বেড়ে ওঠে, ‘ঢের আগে শান্তির সম্পূর্ণ বয়ঃক্রম
হয়ে গেছে ব’লে সে তো ম’রে গেছে’- সাদা-পাখা বৃহৎ সারস
এই সব কথা ব’লে অন্ধকারে হিমানি রাতের হাতযশ
কিছুটা বিচ্ছিন্ন ক’রে পুনরায় মিছেই ঘুমাতে গেল নীড়ে
গরঠিকানায়, গাছে, প্রতীকের থেকে তার বিষয়কে ছিঁড়ে
একটি চেনার-গাছ আমাদের এই সব প্রকৃষ্ট শিশিরে
ভিজে তবুও স্থির- মেঘের ভিতরে উঠে তবুও সে নীচু
কেউ-কেউ তার কাছে যেতে চায়- তবুও সে সকলের পিছু
চ’লে আসে- আজকে শীতের রাতে (পুনরায়) আমার এ-হৃদয়ের কাছে
গোমূর্খ দেশের ঋদ্ধ, অভিমানী শিল্পীর এচিঙের মতো বেঁচে আছে
সে-জিনিস- সেই সমুদ্রের রাঙা মিরগেল-
পৃথিবীর কালো, তামা সকল মানুষ
বণিক, গায়েন, সৈন্য, ক্রীতদাস, মার, দরায়ুস
সবের মুখের দিকে- শিল্প-ভবনের দ্বার
মন্ত্রী, সান্ত্রি, অধ্যাপক, গণিকা ও ভাঁড়
খুলে দিয়ে যেত যদি- তবুও শান্তির ঢের পূর্ণ বয়ঃক্রম
হয়ে গেছে ব’লে রক্তে সারা-দিন আমরাও খেতেছি চশম।