তিন বছরের মেয়ে

যেইখানে তিন বছরের মেয়ে কমলিরে এক দিন আসিয়াছি রেখে
আকন্দবনের পাশে শ্যাওড়া-ঝাড়ের নিচে ধুন্দুলের ঝোপে
আবার অনেক দিন পরে আজ কোরাপাখি গেছে কী-না ডেকে
মাছ আর ধরা প’ড়ে নাই কী-না আমার এ-বঁড়শির টোপে

তলতাবাঁশের ছিপ ফেলে রেখে শ্মশানের দিকে চ’লে যাই
কয়েকটা গাঁদাচারা লাগালে হত না তার সমাধির পাশে?
কমলিটা কত দিন আসে নাই- কিছু দেখে নাই
কত গাঁদা, হাজরা-দোপাটি কত ফুটে গেছে আমাদের উঠানের ঘাসে
লাগালে হত না তার সমাধির পাশে!

কত দিন গলিত ননির মতো উঠানের রোদে ব্যথা পেয়ে
এসেছে সে আমার বুকের কাছে ছুটে
কত দিন- যখন উত্তুরে হাওয়া মাঠে গেছে ছেয়ে
ঘরে নিয়ে গেছি তারে চড়াইছানার মতো আটকায়ে মুঠে

কত দিন- বৃষ্টির রাতে
যখন জলের ছাঁট লেগেছে তাহার চোখে-মুখে
কেঁদে উঠে আমাদের দেয় নি ঘুমাতে
সারা-রাত জাগায়েছে সামান্য অসুখে-

মনে পড়ে ফীডিং-বোতল এক ভুর
মা’র বুকে দুধ ছিল না ক’
দিন-রাত কফে-কাশে টইটম্বুর
কেবল গরম তেল মাখো

কেবল মিছরি দাও
কেবল বাতাসা দাও কিনে
চিনি গুড় মুড়কির বায়না মিটাও
জীবন কেটেছে তার ক্যারামেল চকোলেট বিনে

জীবনে যে কোনও দিন পায় নাই
হরলিক্স গ্ল্যাক্সো’র স্বাদ
শটি পালো সাগু’র দানাই
গিলেছে অগাধ

জানে নাই
রঙচঙা পুতুল বেলুন কারে বলে
হাঁড়িকুঁড়ি মাটির কড়াই
একশা পড়িয়া আছে আজও খাট-টেবিলের তলে

সাদা ফ্লানেলের ফ্রকে- পুলোভারে- পশমের কোটে
কমলিরে কেমন দেখায়
ভেবে কেউ দেখে নাই মোটে
তিনটি গভীর শীত কেটে গেছে খদ্দরের মালমশলায়

কেটে গেছে একটি বোতামআঁটা জুতো পায় দিয়ে
একটি বোতামআঁটা জুতো
থ্যাঁতলা ব্যাঙের মতো হয়ে গেছে- কত বার গিয়েছে হারিয়ে
উঠানে পড়িয়া আছে আজও তবু তো,

কত দিন আসি নাই- হাতিশুঁড়া থুলকুঁড়ি আরও কত কী-যে
বিড়ালআঁচড়া ঘেঁটু ফণীমনসায়
বুনো ওলে পাকা-পাকা ধুন্দুলের বীজে
এক হাত জমিটুকু ভরে আছে, হায়
এরই নিচে কমলি ঘুমায়!