উপনিষদের ঋষি

উপনিষদের ঋষি মুহূর্তেক মেঘলোকে ব’সে ভাবে: পৃথিবী গিয়েছে ভ’রে
যেন ঢের কামজ্বরো গাভীর বিক্ষোভে,
যেন ঢের হঠকারী ষাঁড়ের পীড়নে
চির-দিন কামতৃষা ওরা আর এরা চির-দিন হঠকারী- হা- হা-
তার পর মায়াবীর তাসের মতন সেই সব মেঘ উড়ে যায়
পৃথিবী গভীর হয়ে জেগে ওঠে বড়-বড় ব্যাঙ্কে- সঙ্ঘে- বিরাট অফিসে
সাদা- রক্ত অজস্র প্রাসাদে
নচিকেতারেও যেন রূপান্তরিত করিতে পারে এই সব সৌন্দর্যের প্রীতি দিয়ে
আজিকার এ-মৃত্তিকা- আজিকার পৃথিবীর এই গাঢ় মৃত্তিকাজননী
যাহারা প্রত্যুষে উঁচু ছাদে চ’ড়ে শহরের দিগন্ত দেখেছে
তাহাদের কাছে শুনি মানুষের কৌশলের অপরূপ গরিমার কথা
আমাদের বুকে তাই সারা-দিন- সারা-দিন আছে এক গাঢ় একাগ্রতা
আমাদের সব স্রোত নষ্ট ক’রে দিয়ে যেও, কিন্তু এই গাঢ় একাগ্রতা
ইহারে ইঁদুর ভেবে হয়তো খেলিবে তুমি, হে সময়, এর সাথে বিড়ালের মতো
আমরা জীবন চাই, কাজ চাই, তবু, আহা, কোনও ক্ষুদ্র কোনও অন্ধ জীবনের এ-প্রকোষ্ঠেও
আমরা ক্ষুধিত- আমরা অন্ন চাই- অন্ন চাই- যদিও করিতে চা’বে আমাদের তুমি পরাহত
হে সময়,- কাঠুরিয়া আমাদের কেটে যায় বার-বার- তার পর গুঁড়ি প’ড়ে থাকে
তবু জানি, নদী এক আমাদের শিকড়ের মৃত্তিকারে মাখে
বার-বার জলের আনন এনে- অর্ধপরিচিত মৃত যেন এক বনিতার মতো,-
রাতের বাতাস আসে।… নক্ষত্রালোকের থেকে উজ্জ্বল মনীষা নিয়ে বলে বৃহস্পতি
তোমাদের রক্ত শুষে লক্ষ-লক্ষ ড্রইংরুম পেল অব্যাহতি
বিচিত্র ড্রামের শব্দ চারি-দিকে;- উঁচু-উঁচু ফ্যাক্টরি- ব্যাঙ্ক নিয়ে উন্মুখ প্রগতি
জেগে আছে। তোমাদের ঘুম পায়? কী-বা ক্ষোভ যারা শৌর্যে জেগে আছে তাহাদের প্রতি!