ভুল করে নাই জানি

ভুল করে নাই জানি আমার হৃদয়- জানি আমি কোনও দিন ভুল করে নাই
এ-পৃথিবী যে-বেদনা দিতে পারে- যে-আঘাতে বুকে রক্ত হয়ে যায় ছাই
সমস্ত মুছে যায় আজও ভোরে- দু’পহরে- আজও শান্ত সন্ধ্যার বাতাসে
যখন দাঁড়াই আমি অশ্বত্থ শিরীষ জাম নাগেশ্বর ঘেরা মৌন বনানির পাশে
যখন দাঁড়াই আমি একা-

অশ্বত্থের বুক থেকে- নিবিড় বনের থেকে কী-যে শান্তি কী সান্ত্বনা চির-দিন জাগে
পৃথিবীতে যারে আমি সব-চেয়ে ভালোবাসি- তার চেয়ে আরও যেন ঢের ভালো লাগে
অশ্বত্থের ডালপালা: কোন যেন কত যেন শত-শত শতাব্দীর আগেকার পাখির মতন
গভীর বিশাল ডানা মেলে দিয়ে নীলাভ আকাশ রোদ নক্ষত্রের সাথে তুমি মিশে আছো বন

অসংখ্য নিবিড় ডালে মহানিম নিম জাম কত দিন কত ভোরে দিয়ে গেছে দেখা
যত বার ক্লান্ত চোখে ঘুম আর মৃত্যু আসে- পৃথিবীতে সব-চেয়ে একা
ধুলো-কাঁকরের পথে যত বার নিজেরে খুঁজে পাই- মৃত্যু আর ঘুম আসে চোখে
রেনট্রির গান শুনি- চেয়ে দেখি অশ্বত্থের ডালপালা ভ’রে গেছে ভোরের আলোকে

বনানির কোল চাই- চাই আমি- শিশু ঝাউ কৃষ্ণচূড়া জামের পল্লব
আলো রোদ অন্ধকার নক্ষত্রের সাথে এরা হৃদয়ে জাগায়ে যায় মৌন অনুভব
মনে হয় প্রান্তরের ঘাসে ব’সে অসংখ্য পাতায় ভরা শিরীষের অশ্বত্থের একখানা ডাল

সৃষ্টির জন্মের আগে সঙ্গে ছিল যেন মোর- সৃষ্টির মৃত্যুর পরে সঙ্গে র’বে যেন চির-কাল
আর এই মৌন শান্ত অনুভব র’য়ে যাবে-
সৃষ্টির মৃত্যুর পরে সঙ্গে র’বে,- আজ এই ধোঁয়া রক্ত কাঁকরের পথের ভিতরে
রূপ যদি ব্যথা দেয়, স্বপ্ন যদি ভেঙে যায়- প্রেম যদি ধুলো হয়ে ঝরে
অবসাদে প্রাণ যদি ভ’রে যায়- ঘুম আর মৃত্যু যদি বারবার কথা কয় চোখে
তবুও শুনিব আমি রেনট্রি গাহিছে গান- জানিব নতুন ভোরে নক্ষত্রের মন আলোকে
অশ্বত্থ নতুন সৃষ্টি রচিতেছে-

পৃথিবীর পথে-পথে ঘুরি আমি- সোনালি রঙের ডানা দগ্ধ করে- চোখ অন্ধ করে
তার পর চেয়ে দেখি দেবদারু ঝাউ নিম পাহাড়ের প্রান্তরের পথ আছে ভ’রে
নিবিড় মেঘের মতো দাঁড়ায়ে রয়েছে তারা- বিশ্বাসীর বিধাতার মতো
পৃথিবীতে শূন্যতা নাই ক’ আর- বিচ্ছেদ বেদনা রক্তে হয় না ক’ হৃদয় বিক্ষত
মরণের ঘুম আর মৃত্যু নয়।