কবি কাহিনী

হাত পেতে বজ্র নেওয়া, কব্জি পুড়ে কাঠ
সে-হাতে কলম ধরে রয়েছে আকাট

ভাবে প্রেম লিখে যাবে, পোড়া রক্ত লেখে
বিন্দু বিন্দু অভিশাপ নামে এঁকেবেঁকে

বাইরে থেকে দেখা যায় শ্রীরূপা অঙ্গার
পা রেখে দাঁড়িয়ে আছে শিরোভাগে তার

দুই বাহু ঊর্ধ্বে তুলে পা দুটি ধরে সে
ভাবে বুঝি পৌছে গেছে শিল্পপাদদেশে

কাঠ কজি স্পর্শে কাঁপে, লিখে বসে- ‘জয়।’

দেবীমূর্তি এই জ্বলছে, এই ভস্ম হয়…

অন্ধকার বিধিআজ্ঞা, সাধনা সকল ক্ষুৎপিপাসা
বাড়ে কমে জল, এল বিধি আজ্ঞা সমুদ্র যাত্রার
রচনাবিজ্ঞান, তার শত তল, সহস্র আকার
প্রথম যে বুলি ফোটে সে উষা, মা বোল, মাতৃভাষা…

অন্ধকার বিধিআজ্ঞা, ভিতরে কয়েকশ বিন্দু তারা
তাই দিয়ে নির্ণয়। তারা মেঘে ঢাকে, চ্যুত হয়, সরে-
তলায় সমুদ্র বইছে, ভরসা নেই কখন কী করে
তাই দিয়ে গন্তব্য, দিক ঠিক হবে, শুরু হবে, সারা…

অন্ধকার বিধিআজ্ঞা। পদে পদে বাধা ও পাহারা।
ভাষাই সমস্ত ভাঙে।
শ্লোকে শ্লোকে হাঁটো যাত্রী ধারা…

হেঁটে আসছি
মাঠের পর মাঠের রাস্তা
গাছের পর গাছের সারি
রোদে শুকনো কাদাপুকুর
শুকনো সাপ, মরা শেয়াল, ভামের গর্ত
বালির ওপর দলকে দল কাঁকড়া বিছে
গাছের ডালে আটকে থাকা তক্ষকের
টকটকটক
পেরিয়ে এলাম
খুনে জন্তু চোর শিকারি ঠ্যাঙাড়ে দল
পেরিয়ে এলাম
জুতোর মধ্যে ভাঁজ করা এক নকশা কাগজ
কাঁধের ওপর মরচে পড়া দোনলা আর জাল ছাঁকনি
খুঁজতে খুঁজতে সামনে সরু জংলা নদী
পিছনে, হ্যাঁ, কথামতন যমজ পাহাড়
নদীর তীরে
বালির সোনা সোনার বালি ছাঁকতে ছাঁকতে
আমার আগেও অনেক লোক
সোনার বালি বালির সোনা ছাঁকতে ছাঁকতে পাগল হল
তাদের টুপি ছেড়া পোশাক খাবার বাসন টর্চলাইট
ছড়িয়ে আছে তাদের ঘোড়া তামাক পাইপ ঘোড়ার অস্থি
তাদের হাড়
ছড়িয়ে আছে ছাঁকতে ছাঁকতে
বালির সোনা সোনার বালি ছাঁকতে ছাঁকতে
আমারও এই জীবন যাচ্ছে
সূর্য নামল
ছায়া ফেলছে যমজ পাহাড়
ফিরে যাবার উপায় নেই…

কাল্পনিক কাহিনী। নীল জল
এক ফোঁটায় রদবদল ঘটে
কল্পনীল এক কাব্য জল
লেখক, তাকে পূর্ণ করো ঘটে

আটশো চৌষট্টি কোটি সাল
একটি দিনরাত্রি ব্রহ্মার
কল্প হল তাই, কল্প শেষে
প্রলয় এসে পড়ে পুনর্বার

কল্প লেখা? কই গো বাস্তব
কোথায় তুমি? পায়ে কোথায় মাটি?
হাতে কোথায় অন্ন? শিরে ছাদ?
দু’বেলা গ্রাস তুলতে কাটাকাটি!

মাটির পেটে বসানো ঘট, ঘটে
যেটুকু জল, তাতেই ভাসে চাঁদ
কবি ছুঁলেই প্রণয়দোষ ঘটে
পায়ের কাছে এগিয়ে আসে খাদ…

তবুও তাকে ধরাই হল সব
ধরো আমায়, ঘটে ডোবাও, স্তব!

ঘোড়া দৌড়ে যায়…
তার পিছনে পরীনটিনী নাচে
ঘোড়া থমকে যায়!
সে কী! এখনো কোথাও কি পরী আছে?

ঘোড়া দৌড়ে যায়…
গাঢ় পরীগন্ধে মাথা ভ’রে আসে!

ঘোড়া থমকে যায়!
ছিছি, যা খুশি তা লিখে বসে আছে!

ঘোড়া দৌড়ে যায়…
কবি স্বপ্নে উঠে বসে পড়িমরি
গাছে গাছে ফ্যান, ফ্যানে দড়ি

পরীনটিনীরা ঝুলে আছে

সীমা তো সীমানা মাত্র, শুরু মাত্র, জল যেন কী এক চিন্তায়
শেষ ঘেঁষে অদৃশ্য হল, অবশিষ্ট আকাশের গা-য়
দুই চারি ছত্র মেঘ পয়ার গেঁথেছে, তুমি তার পাঠোদ্ধার
এখানে দাঁড়িয়ে করো, বলো তো ও মেঘ থেকে ওই পারে কী পড়া
যাচ্ছে, এপারে কী পাঠযোগ্য আকাশ সীমায়?
হায় হায় আকাশ বললে আপত্তি করো না, ওই যে
ছত্রে ছত্রে পা ফেলেই সন্ধে নামছেন…মধ্যমায়
একফোঁটা আগুন নিয়ে দিগন্তে পরিয়ে দ্যাখো
দেখতে দেখতে কী রকম চাঁদ উঠে যায়।

চান্দ্রপথ। সন্ধ্যাভাষা।
তমসাতল। মৃত্যু। ভয়।
ঈর্ষা ক্রোধ, ঘাতকদ্বয়।
নিজেই চলে হাড়ের পাশা।

সান্ধ্যপথ। প্রণয় শোক।
জংলাগাছ। মাটির ঢিবি।
তমসাতল, বনপৃথিবী।
বলছে: ‘আরো ভিতরে ঢোক!’

ভিতরে দ্যাখে অন্ধ চোখ;
নিজেই ভাঙে হাড়ের পাশা
নিজেই পোড়ে সব ঘাতক

জংলাগাছে রত্নভাষা

মাটি তো নয়: উইয়ের ঢিবি
ঢিবির তলে কবির চোখ
যা, ওর গায়ে কে হাত দিবি

চাঁদ বলেছে: জ্যোৎস্না হোক।

জ্যোৎস্না হয়। সান্ধ্যপথ
এগিয়ে আসে, পিছিয়ে যায়
আরো গভীর মরীচিকায়

আমিও যাই, আমিও যাই
পিছনে থাকে আগুন ছাই
পিছনে থাকে তমসাতল
কাঁটার মতো কৌতুহল
পিছনে থাকে, হাতে কেবল
দু এক মুঠো ভবিষ্যৎ
দু এক মুঠো সান্ধ্যশ্লোক

আমার হাতে কালো মধু-র বাটি
মুখ ডোবাল ধূসর হাউন্ড
নাক লম্বা শেয়াল
রক্তজমা খুনে

তারাঅঙ্ক গুণে
আমার হাতে কালো মধু-র বাটি
আমার সামনে আকাশ-উঁচু দেয়াল
পিছন দিকে বুড়ো একটা নদী

আজ এ কারাগারে
থাকলে আর কষ্ট হয় না
রাত্রি যত বাড়ে
মাথার ওপর ঝিলিক খেলায় সহস্র এক রুপোর গয়না
আকাশ পাঁচিল তার ওপরে উঠিয়ে দিই মধু-র পাত্র
ভাসিয়ে দিই বুড়ো নদীর জলে

পরক্ষণে দেখি জলে স্থলে
দিবসনিশি ঘুরছে সেই কালো মধু-র বাটি
ঘুরতে ঘুরতে তৈরি হচ্ছে নতুন ভূত্বক

আমার হাতে কুলালচক্র, মাটি

চোর বলে ডঙ্কা দাও, বলল সে পরের স্ত্রীকে চুরি
করেছে, পরের বিদ্যা, পরের ঘরের ছন্দতীর
নিজের ধনুকে তুলে ঐ দ্যাখো সে নাম কিনছে বীর
দুশমন, পহচান যাও, মারো একটা দুটো তিনটে তুড়ি

বলো রাজ অনুগ্রহ লাভ করতে পিছন দরজায়
দ্বারীকে উৎকোচ দিল, কোটালকে যথেষ্ট বখেরা
রাজাকে দুঃখের কথা ব’লে ব’লে দিনকে অন্ধেরা
বানাল সাচমুচ, মুখ অমাত্যেরা দিল ‘হায় হায়’
রাজা শিরোপা চড়াল হায় হায়

আসলে যোগ্যতা নেই, চোর নাম এখনো রটাও
ভিক্ষুকের ভিক্ষা থেকে, প্রেমিকের প্রেম থেকে নিয়ে
শোক থেকে শোকাশ্রু আর কলঙ্কীর কলঙ্ক ভাঙিয়ে
কাজ চালিয়ে যাচ্ছে যদি দেখতে চাও যন্ত্র ঘরে যাও

যন্ত্রঘর মানে হল পাঠকক্ষ তার
শরীর মস্তিষ্কমাত্র, মস্তিষ্ক অঙ্গার
একা দশমূর্তি হয়ে নগ্ন কটা হাড়
এ ওকে পালন করে, সে তাকে সংহার

১০

সাপ তো চোখ দিয়ে শুনতে পায়।

তোমার শরীরও আমি চোখ দিয়েই শুনি,
কোমল কঠিন স্তূপ মেঘ
শুনতে শুনতে ধ্বনি হয়, ধ্বনি ধ্বনি, শ্বাসরুদ্ধ গান
তাও চোখ নিচু হয়ে আসে…
যা কিছু অপ্রাপ্য তার শোকদুঃখ খসে পড়ে ঘাসে
খণ্ড। খানখান।

তুমি সেই নিঃশ্বাস শোনোনি।
সেই সাপ, শীতল রক্তের কবি
খাতায় দু-ফালা জিভে উড়ে যাওয়া হাঁস এঁকে রাখে

ও হাঁস, তুমিই ঠুকরে খেয়ে ফ্যালো তাকে

পড়ে থাকে খোলা খাতা,
ঝিলমিল সংগীত চিহ্ন, রাগ হংসধ্বনি।

১১

সে ছিল বাংলার মেয়ে। রুমালটি মুঠো করে
প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলা যেত টিউশনিতে
দু এক পা এগিয়ে দিতে দিতে
দু লাইন লেখা এল। পরদিন আরো দু লাইন।
এইভাবে ক্রমে একদিন
লেখাটি সম্পূর্ণ হয় কোনো এক দোলপূর্ণিমায়

হাতি হয়। ঘোড়া হয়। মুহূর্তে বকুলগন্ধে বন্যা এসে যায়

সে ছিল বাংলার মেয়ে।
মা কিংবা দিদির হাতে ধরা পড়ল পরবর্তী যে কোনো সন্ধ্যায়

মাঝখান দিয়ে হেঁড়া এবড়োখেবড়ো দু-দুটো জীবন
দোমড়ামোচড়া আধখানাকে
এখনো সমান করতে চেষ্টা করে যায়…

১২

কুড়ুল আমার শেকল কাটল
রক্ত বেরোয় শেকল থেকে

শেকল মাটির তলায় গেছে
ইচ্ছেমতন এঁকেবেঁকে

মাটির তলায় লেজ আপসায়
মাটির ওপর জাগে ফাটল

মাথার ওপর ধমকায় বাজ
সামলে পা ফেল, সামনে পা তোল

সমস্ত পা-য় রক্ত ঝোঁঝায়
এগিয়ে যাবার উপায় কী তোর

এক বিদ্যুৎরেখায় ধরা
ক্রীতদাসের হাজার বছর

শেকল ঘোরে শেকল ফোঁসে
আটকাতে চায় পা দুটো ওর

কলম কুঠার, রণ-পা কলম
মাঠ ফুড়ে যায় শতাব্দী ভ’র

কুঠার আমায় স্বাধীন করুক
শস্যভরা হে রক্তক্রোড়

১৩

সরস্বতী, তোমার ঘট নেই
বোনের ঘট আছে
সরস্বতী, তোমার সামনেই
যা বলার তা বলেছি তার কাছে

তোমার আছে বীণা ও রাজহাঁস
খোকা পালের তুলিকা এঁকে ছিল
নীল পটের পিছনে সাদা কাশ

স্কুলপাড়ায় প্রতিমা গড়া হত
খোকা পালের মেয়ের নাম তুলি
চোখ আঁকার সময়ে এনে দিত
বাবাকে সে-ই রঙের বাটিগুলি

লক্ষ্মী ছিল তুলির ভাল নাম
ঠাকুর রেখে সামনে, বললাম
ঐ যা সব ছেলেরা বলে থাকে:

আমাকে তোর ঘট আঁকতে দিবি?

হাত ছাড়িয়ে পালিয়ে গেছে দুরে
পালক ফেলে গিয়েছে রাজহাঁস
সেই পালকে কলম বানিয়েছি
সেই কলমে এঁকে দিয়েছি কাশ

কোজাগর আর মাঘী শ্রীপঞ্চমী
এক হয়ে যায়, জ্যোৎস্না ধান জমি,
তার উপরে বীণা উড়তে থাকে

পূর্ণঘট সমস্ত পৃথিবী!

১৪

মদে ডোবা লোক, কবি।
মাথা ভাসছে পিপের ওপর।
পিপেটি সমুদ্র যাত্রী-
যাও, ওকে পরাও টোপর।

টোপরে পতাকা উড়ছে,
তাকে ঘিরে গাঙচিলও ওড়ে
ঠোঁটে সদ্য ধরা মাছ। কৌতুহলী হতে গিয়ে
ঠোঁট ফসকে জলে এসে পড়ে

ফসকে পড়া শব্দ ধরে
মদ থেকে ভেসে ওঠে লোক।
পিপেদ্বীপ। তার ওপর সে বসে কবিতা লিখছে…
হে সমুদ্র, এই দৃশ্য ফ্রিজ করা হোক!

১৫

খড় পড়ে আছে।

রক্তমাংস, লাবণ্য ও ত্বক
যোগ করো ওতে

যোগ করবার অস্ত্র ফেলে আহাম্মক
পুঁথি নিয়ে বৃক্ষ চুড়ে ওঠে।

তাকায় চারদিক! জ্যোৎস্না। শুনসান জঙ্গল,
মেঘের ভিতরে চাঁদ ছোটে

হরিণরা জল খেতে আসে, আঁকাবাঁকা শিং-এ
প্রাচীন অক্ষরমালা ফোটে

কী অর্থ কী পাঠোদ্ধার? লাবণ্য কী? ত্বক?
এই নিয়ে আহাম্মক
রাত্রি জাগে চুলচেরা তর্কসিন্ধুব্রতে

খড়ের কাঠামে প্রাণ বিদ্ধ করে সে কোন কুহক?

ছন্দব্যাধ মিশে যায় সকালবেলার জনস্রোতে…

১৬

অন্ধ এক শান্তি পারাবত
বসে গৃহের চুড়ে
সাদা পতাকা সাগরে ভেসে ওঠে
জাহাজ ভাসে দুরে

অন্ধ সেই শুভ্র পারাবত
যুদ্ধ তার মাথায় গাঁথে তীর
সকলে ভাবে খঙ্গাঅলাপাখি
বিচিত্র কী সৃষ্টি প্রকৃতির

সবাই তাকে ভয়েই দূরে রাখে
ওর কাছে এগিয়ে কাজ নেই
ডানা ঝাপটে বেড়ায় পারাবত
কপাল ঠোঁটে রক্ত ঝরছেই

অন্ধ পাখি, যেদিকে রণভূমি
সেদিকে যায়, চোখে দ্যাখে না ব’লে
লাশের কূপ, বোমায় ধ্বসা বাড়ি
জীবিত শিশু মরা মায়ের কোলে

নিরাপদেই পতাকা থাকে সাদা
নিরাপদেই শান্তি ভাসে দূরে
ফেরার পথে ভুল করে সে পাখি
বসে নতুন অট্টালিকা চূড়ে

অন্ধ সেই পাখিকে তাড়া করে
অন্য সব পাখি ও মানুষেরা
বোঝে সে-পাখি ভবিতব্য তার
শূল বেঁধানো কপাল নিয়ে ফেরা

সেই তো কবি, অন্ধ পারাবত!
পিঠের ওপর সূর্য নিয়ে ঘোরে
পুড়ে শরীর কালো যখন- সে-ই
কোকিল হয়, কাঁপে গানের ঘোরে

কাছে আসে না, দূরেই থাকে ভয়ে
পাঠায় গান, অচেনা লোকালয়ে

সরষে ফুটে আছে।
হলদে ফুল। মূর্ছা সংকেত
রোদের মাঠ। কৃষাণী, ধান গাছে।

কাকতাড়ুয়া পাহারা দেয় ক্ষেত।

ভয় পায় না কেউ।
চড়াই হাঁড়িমাথায় ঠোট ঠোকে
কুকুর হাতা টেনে বেঁকিয়ে দেয়
ছাতারে মাথা ধরায় ব’কে ব’কে

চাষার কাছেও তত আদর নেই
কী হবে একে সাজিয়ে ঝুঠমুট?
আচ্ছা থাকুক। এক জামাতেই চলে
খেতে চায় না, দুটো হাতেই কুঠ

একলা মাঠে দাঁড়িয়ে কবি ভাবে
সরষে উজল এমন রোদের ভূমি
কাকতাড়ুয়ার পার্টটুকু না পেলে
কোথায় গিয়ে দেখতে পেতে তুমি

পাহারা দাও, কেউ তা মানবে না।
ছন্দ গাঁথো, শুনবেও না কেউ
তুমি দেখবে তিসির ফুলে ফড়িং
তুমি দেখবে কৃষাণী। তার ঢেউ!

আর এক জন আছে তোমার মতো
অবশ্য সে দাঁড়ায় না। সে হাঁটে
সকাল থেকে দুপুর পার করে
বিকেল হলেই গড়িয়ে নামে পাটে

ঐ যে বিকেল হচ্ছে, এইবার
সূর্য এসে ডাকবেন তোমাকে:
‘নতুন কিছু লিখলে কী আর? শোনাও!’

লিখলে কী জবাব দেবে তাঁকে!

অন্ধকারে বজ্রপাত ধরো।
সারাজীবন গায়ে ইলেকট্রিক
ছলকে যাবে, পাশে আসবে যারা
তারাও মোহে ঝলসে যাবে ঠিক

অন্ধকারে বজ্রপাত ধরো
গর্জনের মুখের এত কাছে
যাওনি আগে, নাক মুখ চোখ নেই
বিরাট দুটো চোয়াল পুরো খোলা

ব্ৰহ্মাণ্ড, আলজিহ্বার কাছে

ঘুরছে ঘুরছে, তুমিও ঘুরে ধরো
দু-এক পাকে সহপাক শেখা
বাজ পড়বে, গর্জনে ঝিলিকে
দিগ্বিদিকে মিলিয়ে যাবে একা

মাঠের মধ্যে দাউদাউ গাছ: লেখা!

১৯

এ শুধু আমার স্বপ্ন নয়;
জলে ডুবে আছে মস্ত ঘড়ি।
আমার আগে, এক-সমুদ্র কাল অবধি যত অশ্বারোহী
এ রাস্তায় গেছে, তারা যে যত নিয়তি চক্র, ক্ষুৎসায়র, বজ্র, মরীচিকা
ভোগ করে ছিল, তার শতাংশের একাংশ উদয়
হল আজ এই মরুমাঠে। -ঝড়ে উড়ে গেল সব পরী।

আসৌরমণ্ডলভূমি কর্ষণের পর
চাষী ফেলে গিয়েছেন দিগন্তে চাঁদের টুকরো
তাঁর ক্লান্ত লাঙলের ফাল

আজ আমি দেখতে পাচ্ছি। কাল অন্য কেউ দেখবে।
সামনে সমুদ্র-এক কাল…

ডুবে যায়, ভেসে ওঠে ঘড়ি