আঁখিতে আঁখিতে ওরা কহে কথা

কবি আর তাঁর মানসী দ্রাক্ষা-কুঞ্জে চোখে চোখে কথা কয়; সুরে সুরে মনের ভাবের মালা গাঁথে-এ ওর গলায় দেয়; আর সাকি পরিবেশন করে তাদের আনন্দের শিরাজি। তার আপন হৃদয়-পেয়ালা থাকে শুন্য, তাকে মুখ-ভরা হাসি নিয়ে তাদের বাসি হৃদয়কে সঞ্জীবনী-সুধা দিয়ে জীবন্ত করতে হয়। ও যেন ব্রজের ললিতা। রাধা-কৃষ্ণের মিলন ঘটিয়ে তিনি তাঁর উপবাসী মনের প্রসাদ পান। তাই সাকির তৃষিত-আত্মা যে-গান গেয়ে ওঠে, তারই ভাষা ফুটে ওঠে কবির রবাবে।

[গান]

(যবে) আঁখিতে আঁখিতে ওরা কহে কথা
দু’টি বনের পাখি।
শুধু শিরাজি ঢালি, আমি চোখের বালি
আমি পাষাণ সাকি।।

রিক্ত ওদের হৃদয়-পেয়ালায়
আমি অমৃত ঢালি,
আমারই অন্তর শুধু পাইল না প্রেম-মধু
রহিল খালি।

(আমি) রহি’ আভরণ-হীনা বাধি ওদের
হাতে প্রেমের রাখি।।
আমি হাসিয়া রচি যার কুঞ্জ-বাসর
দুয়ারে দাঁড়ায়ে তারি জাগি রাতি;
আমি শিয়রে রহি’ হায় নিজেরে দহি
যেন মোমের বাতি।
আমি গাঁথিয়া মালা, দিই সখির হাতে,
দেখি কে দেয় কার মালা কার গলাতে;
শিরাজি ঢালিতে হায় পিয়ালা ভাঙিয়া যায়
নিরালায় বন্ধুর মিলন-ছবি
আমি হৃদয়ে আঁকি।।