আমি তুরগ ভাবিয়া মোরগে চড়িনু

আমি তুরগ ভাবিয়া মোরগে চড়িনু
(সে) লইল মিঞার ঘরে।
আমার কালি মা ছাড়ায়ে কলেমা পড়ায়ে
বুঝি মুস্লিম করে!
আমায় বুঝি মুস্লিম করে গো-
মুর্গীর লোভে দর্গায় এসে
বুঝি টিকি মোর হরে গো!
আমার শিখা করি দূর রেখে দেবে নূর,
জবাই করিবে পরে গো!

আমি বাসব ভাবিয়া রাসভে পূজিনু
স্বর্গে যাইতে সোজা;
সে যে লয়ে এঁদো ঘাটে, ফেলে দিল পাটে
ভাবিয়া ধোবির বোঝা!
হলো হিতে-বিপরীত সবি গো!
আমি ভবানী ভাবিয়া করিতে প্রণাম
হেরি বাগ্দিনি ভবী গো!
আমি শীতল হইতে চাহিনু, আনিল
শীতলা-বাহনে ধোবি গো!

বাবা শিবের বাহন ভাবিয়া বৃষভ-
লাঙুল ঠেকানু ভালে,
হায় নিল না সে পূজা, শিং দিয়ে সোজা
গুঁতায়ে ফেলিল খালে!
আমার কপাল বেজায় পোড়া গো!
আমি শালগ্রাম ভেবে রাখিনু চক্ষে
হেরি ঝাল-মাখা নোড়া গো!
আমার ভাগ্য বেজায় ফুটো গো,
বাঁকা অঙ্গ হেরিয়া জড়ায়ে ধরিতে
হেরি ত্রিভঙ্গ খুঁটো গো!

আমার মহিষী-গৃহিণী খুশি হবে ভেবে
মহিষ কিনিয়া আনি,
বাবা মরি এবে ত্রাসে, শিং নেড়ে আসে
মহিষ, মহিষীরাণী!
আমি কেমনে জীবন ধরি গো!
আমি ‘হরি বোল’ বলে ডাকিতে হরিরে
হয়ে যায় ‘বল হরি’ গো।।

[কীর্তন]


[নজরুলের ‘চন্দ্রবিন্দু’ গ্রন্থের অন্তর্গত ৪৭ নং গান ‘আমি তুরগ ভাবিয়া মোরগে চড়িনু’ গানটির সঙ্গে ‘নজরুল-গীতিকার’-র অন্তর্গত এবং গ্রামোফোন রেকর্ডে ধারণকৃত এই গানটির পার্থক্য রয়েছে।]