আবার কখন্ আস্বে ফিরে সেই আশাতে জাগ্ব রাত,
হয় তো সে কোন্ নিশুত রাতে ডাকবে এসে অকস্মাৎ!
সেই আশাতে জাগ্ব রাত।
যতই কেন বেড়াও ঘুরে
মরণ-বনের গহন জুড়ে
দূর সুদূরে,
কাঁদলে আমি আসবে ছুটে, রইতে দূরে নারবে না,!
সেই আশাতে জাগ্ব রাত।
কপট! তোমার শপথ-পাহাড় বিন্ধ্যসম হোক্ না সে,
ঝড়ের মুখে খড়ের মতন উড়বে তা মোর নিশ্বাসে!
একটি ছোট্ট নিশ্বাসে!
রাত্রি জেগে কাঁদ্ছি আমি
শুন্বে যখন, হে মোর স্বামি,
সুদূরগামী!
আগল ভেঙে আসবে পাগল, চুমবে সজল নয়ন-পাত,
সেই আশাতে জাগ্ব রাত।
জানি সখা, আমার চোখের একটি বিন্দু অশ্রুজল,
নিব্বে তাতেই তোমার বুকের অগ্নি-সিন্ধু নীল গরল,
আমার চোখের অশ্রুজল!
তোমার আদর-সোহাগিনী
তাই তো কাঁদায় নিশিদিনই
এ অধীনী,
ভুলবে জানি তোমার রানি গরবিনীর সব আঘাত!
সেই আশাতে জাগ্ব রাত।
আসবে আবার পদ্মানদী, দুল্বে তরী ঢেউ-দোলায়,
তেম্নি ক’রে দুল্ব আমি তোমার বুকের পর্কোলায়।
দুল্বে তরী ঢেউ-দোলায়।
পাগ্লি নদী উঠ্বে খেপে,
তোমায় তখন ধর্ব চেপে
বক্ষ ব্যেপে,
মরণ-ভয়কে ভয় কি তখন, জড়িয়ে কণ্ঠ থাক্বে হাত!
সেই আশাতে জাগ্ব রাত।
পোড়া চোখের জল ফুরায় না, কেমন ক’রে আসবে ঘুম?
মনে পড়ে শুধু তোমার পাতাল-গভীর মাতাল চুপ,
কেমন ক’রে আসবে ঘুম?
আজ যে আমার নিশীথ জুড়ে
একলা থাকার কান্না ঝুরে
হতাশ সুরে,
পুবের হাওয়ায় কাঁদবে সে সুর, আস্বে পছিম হাওয়ার সাথ!
সেই আশাতে জাগ্ব রাত।
বিজলি-শিখার প্রদীপ জ্বেলে ভাদর রাতের বাদল মেঘ,
দিগ্বিদিকে খুঁজছে তোমায় ডাক্ছে কেঁদে বজ্র-বেগ-
দিগ্বিদিকে খুঁজছে মেঘ!
তোমার আশায় ঐ আশা-দীপ
জ্বালিয়েছে আজ দিক ভ’রে নীপ,
হে রাজ-পথিক,
আজ না আসো, এসো যেদিন দীপ নিবাবে ঝন্ঝবাত!
সেই আশাতে জাগ্ব রাত।
(কল্লোল পত্রিকার আশ্বিন ১৩৩০ সংখ্যায় ‘আশান্বিতা’ শিরোনামে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।)