ছল-কুমারী

কত ছল করে সে বারে বারে দেখতে আসে আমায়।
কত বিনা-কাজের কাজের ছলে চরণ দুটি
আমার দোরেই থামায়।।

জানলা-আড়ে চিকের পাশে
দাঁড়ায় এসে কিসের আশে,
আমায় দেখেই সলাজ ত্রাসে
অনামিকায় জড়িয়ে আঁচল গাল দুটিকে ঘামায়।।

সবাই যখন ঘুমে মগন দুরু-দুরু বুকে তখন
আমায় চুপে চুপে
দেখতে এসেই মল বাজিয়ে দৌড়ে পলায়,
রঙ খেলিয়ে চিবুক গালের কূপে!
দোর দিয়ে মোর জলকে চলে
কাঁকন হানে কলস-গলে!
অমনি চোখাচোখি হলে
চমকে ভুঁয়ে নখটি ফোটায়, চোখ দুটিকে নামায়।।

সইরা হাসে দেখে তাহার দোর দিয়ে মোর
নিতুই নিতুই কাজ-অকাজে হাঁটা,
করবে কি ও? রোজ যে হারায় আমার দোরেই
শিথিল বেণির দুষ্টু মাথার কাঁটা!
একে ওকে ডাকার ভানে
আনমনা মোর মনটি টানে,
কি যে কথা সেই তা জানে
ছল-কুমারী নানান ছলে আমারে সে জানায়।
পিঠ ফিরিয়ে আমার পানে দাঁড়ায় দূরে
উদাস নয়ান যখন এলোকেশে,
জানি তখন মনে মনে আমার কথাই ভাবতেছে সে,
মরেছে সে আমায় ভালোবেসে!

বই-হাতে সে ঘরের কোণে
জানি আমার বাঁশিই শোনে,
ডাকলে রোষে আমার পানে,
নয়না হেনেই রক্ত-কমল-কুঁড়ির সম চিবুকটি তার নামায়।।

[দেওঘর
পৌষ ১৩২৭]