অমর-কানন

অমর কানন মোদের অমর-কানন
বন কে বলে রে ভাই, আমাদের তপোবন
আমাদের তপোবন।।

এর দক্ষিণে ‘শালী’ নদী কুলকুলু বয়,
তার কূলে কূলে শাল-বীথি ফুলে ফুল-ময়,
হেথা ভেসে আসে জলে-ভেজা দখিনা মলয়,
হেথা মহুয়ার মউ খেয়ে মন উচাটন।।

দূর প্রান্তর-ঘেরা আমাদের বাস,
দুধ-হাসি হাসে হেথা কচি দুব্-ঘাস,
উপরে মায়ের মতো চাহিয়া আকাশ,
বেণু-বাজা মাঠে হেথা চরে ধেনুগণ।।

মোরা নিজ হাতে মাটি কাটি, নিজে ধরি হাল,
সদা খুশি-ভরা বুক হেথা হাসি-ভরা গাল,
মোরা বাতাস করি গো ভেঙে হরিতকী-ডাল,
হেথা শাখায় শাখায় শাখী, গানের মাতন।।

প্রহরী মোদের ভাই ‘পুরবী’ পাহাড়,
‘শুশুনিয়া’ আগুলিয়া পশ্চিম দ্বার,
ওড়ে উত্তরে উত্তরী কানন বিথার,
দূরে ক্ষণে ক্ষণে হাতছানি দেয় তালি-বন।।

হেথা ক্ষেত-ভরা ধান নিয়ে আসে অঘ্রান,
হেথা প্রাণে ফোটে ফুল, হেথা ফুলে ফোটে প্রাণ,
ওরে রাখাল সাজিয়া হেথা আসে ভগবান্,
মোরা নারায়ণ-সাথে খেলা খেলি অনুখন।।

মোরা বটের ছায়ায় বসি করি গীতা পাঠ,
আমাদের পাঠশালা চাষী-ভরা মাঠ,
গাঁয়ে গাঁয়ে আমাদের মায়েদের হাট,
ঘরে ঘরে ভাই বোন বন্ধু স্বজন।।

[বেহাগ-খাম্বাজ- কাওয়ালি]
[গঙ্গাজলঘাটি, বাঁকুড়া
আষাঢ় ১৩৩২]


বাঁকুড়া জেলার গঙ্গাজলঘাটী জাতীয় বিদ্যালয়টি নদী, পাহড়, বন ও মাঠ-ঘেরা একটি প্রান্তরে। এর নাম ‘অমর কানন’। এই বিদ্যালয় অমর নামক একটি তরুণের তপস্যার ফল। সে আজ স্বর্গে। এই গানটি ঐ বিদ্যালয়ের ছেলেদের জন্য লিখিত।