সান্ত্বনা

চিত্ত-কুঁড়ি-হাস্না-হেনা মৃত্যু-সাঁঝে ফুটল গো!
জীবন-বেড়ার আড়াল ছাপি বুকের সুবাস টুটল গো!
এই তো কারার প্রাকার টুটে
বন্দি এল বাইরে ছুটে,
তাই তো নিখিল আকুল-হৃদয় শ্মশান-মাঝে জুটল গো!
ভবন-ভাঙা আলোর শিখায় ভুবন রেঙে উঠল গো।

স্ব-রাজ দলের চিত্ত-কমল লুটল বিশ্বরাজের পায়,
দলের চিত্ত উঠল ফুটে শতদলের শ্বেত আভায়।
রূপের কুমার আজকে দোলে
অপরূপের ঐ শিশ-মহলে,
মৃত্যু-বাসুদেবের কোলে কারার কেশব ওই গো যায়,
অনাগত বৃন্দাবনে মা যশোদা শাঁখ বাজায়।

আজকে রাতে যে ঘুমুল, কালকে প্রাতে জাগবে সে।
এই বিদায়ের অস্ত-আঁধার উদয়-ঊষায় রাঙবে রে!
শোকের নিশির শিশির ঝরে,
ফলবে ফসল ঘরে-ঘরে,
আবার শীতের রিক্ত শাখায় লাগবে ফুলেল রাগ এসে।
যে মা সাঁঝে ঘুম পাড়াল, চুম দিয়ে ঘুম ভাঙবে সে।

না ঝরলে তাঁর প্রাণ-সাগরে মৃত্যু-রাতের হিম-কণা
জীবন-শুক্তি ব্যর্থ হতো, মুক্তি-মুক্তা ফলত না।
নিখিল-আঁখির ঝিনুক-মাঝে
অশ্রু-মানিক ঝলত না যে!
রোদের উনুন না নিবিলে চাঁদের সুধা গলত না।
গগন-লোকে আকাশ-বধূর সন্ধ্যা-প্রদীপ জ্বলত না।

মরা বাঁশে বাজবে বাঁশি, কাটুক না আজ কুঠার তায়,
এই বেণুতেই ব্রজের বাঁশি হয়তো বাজবে এই হেথায়।
হয়তো এবার মিলন-রাসে
বংশীধারী আসবে পাশে,
চিত্ত-চিতার ছাই মেখে শিব সৃষ্টি-বিষাণ ওই বাজায়।
জন্ম নেবে মেহেদি-ঈসা ধরার বিপুল এই ব্যথায়।

কর্মে যদি বিরাম না রয়, শান্তি তবে আসত না;
ফলবে ফসল- নইলে নিখিল নয়ন-নীরে ভাসত না!
নেইকো দেহের খোসার মায়া,
বীজ আনে তাই তরুর ছায়া;
আবার যদি না জন্মাত, মৃত্যুতে সে হাসত না।
আসবে আবার- নইলে ধরায় এমন ভালো বাসত না!

হুগলি
১৬ই আষাঢ় ১৩৩২