সাম্পানের গান

ওরে মাঝি ভাই!
ওরে সাম্পানওয়ালা ভাই!
তুই কি দুখ পাইয়া কূল হারাইলি অকূল দরিয়ায়।।
তোর ঘরের রশি ছিঁইরা রে গেল ঘাটের কড়ি নাই,
তুই মাঝ দরিয়ায় ভাইসা চলিস সাম্পান ভাসাই।
ও ভাই দরিয়ায় আয়ে জোয়ার ভাটিরে
তোর ঐ চক্ষের পানি চাই।।

তোর চোখের জল ভাই ছাপাইতে চাস নদীর জলে আইসা,
শেষে নদীই আইল চক্ষে রে তোর তুই চলিলি ভাইসা,
ও তুই কলস দেইখা নামলি জলে রে
এখন ডুইবা দেখিস কলস নাই।।

তুই কূলে যাহার কূল না পেলি তারে অগাধ জলে
কেন খুঁইজা মরিস ওরে পাগল সাম্পান বাওয়ার ছলে,
ও ভাই দুই ধারে এর চোরাবালু রে
তোর হেথায় মনের মানুষ নাই।।


কি হইব লাল বাওটা তুইল্যা সাম্পানর উপর।
তোর বাওটায় যত লাগব হাওয়া রে
ও ভাই ঘর হইব তোর তই পর।।

তোর কি দুঃখ ভাই ছাপাইতে চাস বাওটারে রাঙ্গাইয়া,
এবার পরান ভইরা কাঁইদ্যা নে ভাই অগাধ জলে আইয়া,
ও ভাই তোর কাঁদনে উইঠা আসুক রে
ঐ নদীর থনে বালুর চর।।

তুই কিসের আশায় দিবিরে ভাই কূলের পানে পাড়ি;
তোর দীয়া সেথা না জ্বলে ভাই আঁধার দে ঘরবাড়ি;
তুই জীবন কুলে পেলিনা তায় রে
এবার মরণ জলে তালাস কর।।


তোমায় কূলে তুইলা বন্ধু আমি নামছি জলে।
আমি কাঁটা হইয়া রই নাই বন্ধু তোমার পথের তলে।।
আমি তোমায় ফুল দিয়াছি কন্যা তোমার বন্ধুর লাগি’
যদি আমার শ্বাসে শুকায় সে ফুল তাই হইলাম বিবাগী।
আমি বুকের তলায় রাখছি তোমায় গো
পইর‍্যা শুকাইয়াছিনা গলে।।

যে দেশ তোমার ঘর রে বন্ধু সে দেশ থনে আইসা
আমার দুখের সাম্পান ছাইরা দিছি চলতেছে সে ভাইসা,
এখন যে দেশে নাই তুমি বন্ধু গো
আমি সেই দেশে যাই চলে।
আমি সেই দেশে যাই চলে।।

চট্টগ্রাম
জানুয়ারি ১৯২৯

(পূর্ববঙ্গের ভাটিয়াল সুরে)

বাওটা: পান।
দীয়া: প্রদীপ।