সুপার (জেলের) বন্দনা

তোমারি জেলে পালিছ ঠেলে, তুমি ধন্য ধন্য হে।
আমার এ গান তোমারি ধ্যান, তুমি ধন্য ধন্য হে।।

রেখেছে সান্ত্রী পাহারা দোরে
আঁধার-কক্ষে জামাই-আদরে
বেঁধেছ শিকল-প্রণয়-ডোরে।
তুমি ধন্য ধন্য হে।।

আ-কাঁড়া চালের অন্ন-লবণ
করেছে আমার রসনা-লোভন,
বুড়ো ডাটা-ঘাঁটা লাপসি শোভন,
তুমি ধন্য ধন্য হে।।

ধরো ধরো খুড়ো চপেটা মুষ্টি,
খেয়ে গয়া পাবে সোজা স-গুষ্টি,
ওল-ছোলা দেহ ধবল-কুষ্টি
তুমি ধন্য ধন্য হে।।

(* হুগলি জেলে কারারুদ্ধ থাকাকালীন জেলের সকল প্রকার জুলুম আমাদের উপর দিয়ে পরখ করে নেওয়া হয়েছিল। সেই সময় জেলের মূর্তিমান ‘জুলুম’ বড়-কর্তাকে দেখে এই গেয়ে আমরা অভিনন্দন জানাতাম।)

[১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে (১৩৩১ বঙ্গাব্দ) নজরুল ‘ধূমকেতু’ পত্রিকার মাধ্যমে ব্রিটিশ বিরোধী রচনা প্রচার করেন। এই কারণে ২৩শে নভেম্বর কুমিল্লা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে, কলকাতার কলকাতা প্রেসিডেন্সি জেলে রাখা হয়। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই জানুয়ারি নজরলকে ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। হুগলি জেলে থাকাকালে জেল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থা, অপমানমূলক আচরণ ও নির্যাতনের পরিমাণ এতটাই তীব্রতর হয়ে উঠেছিল যে, শেষ পর্যন্ত ১৫ই এপ্রিল থেকে নজরুল-সহ মোট ২১জন রাজবন্দী অনশন শুরু করেন। অনশনের কারণে নজরুল ২৫শে মের দিকে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই ধারণা করা যায় গানটি তিনি রচনা করেছিলেন ১৪ই এপ্রিল থেকে ২৫শে এপ্রিলের ভিতরে।]