আমার সোনার বাংলা

আমি যে দেশকে দেখি সে কি এই স্বপ্নভূমি থেকে জেগে ওঠা
বহুদূরব্যাপী কল্লোলিত, সে কি রূপসনাতন
সে কি আমার সোনার বাংলা, কোনো রূপকথা নয়!
তার চক্ষুদ্বয় তবে এমন কোটরাগত কেন, মুখ জুড়ে সূর্যাস্তের
কালোছায়া,
কেন তার সবুজ গাছের দিকে সহসা তাকালে দেখি
ধূসর পিঙ্গল বর্ণ, নেমেছে তুষার আর মাছে সারি সারি
কুয়াশার তাঁবু
লোকশ্রুত এই কি সোনার বাংলা শোনা যায় শুধু শোকগাথা!
কেউ কেউ দেশের বদলে তাই মানচিত্র দেখায় কেবল
বলে, এখানে গোলাপ চাষ হয়, এখানে অধিক খাদ্য ফলে
গান শোনে টেপরেকর্ডার বাংলার চিরন্তন মুগ্ধ ভাটিয়ালি
আর বারোমাস পাখির কূজন
তারও কিছু সামান্য নমুনা এই পেটে
যেন মেপে মেপে দেশের মডেল একখানি
অপরূপ কাসকেটে তুলে রাখা আছে!
মৃদু টেপে এখানে পাখিরও গান শোনা যায়, ম্যাপের রেখায় মূত্য
স্নিগ্ধ নদী, শেস্যক্ষেত, সবুজলালিত ঘন পার্ক
সুচারু ফোয়ারা থেকে ঝরে জল পান করে পাথরের
পীতাভ হরিণ
চেয়ে আছে স্বপ্নময় বাংলাদেশ ট্যুরিস্টের মনোরম ম্যাপের পাতায়।
আমি যে দেশকে দেখি সে যে এই স্বপ্নভূমি থেকে উঠে আসা
আপাদমস্তক ভিন্নভিন্ন
সে যে আজো জয়নুলের দূর্ভিক্ষের ছিন্নভিন্ন
সে যে আজো জয়নুলের দুর্ভিক্ষের কাক
আজো বায়ান্নর বিক্ষুব্ধ মিছিল
আজো আলুথালু, আজো দুঃখী,
আজো ক্ষুন্ন পদাবলী!
তার কনকচাঁপার সব ঝাড় কেটে আজ সেখানেই বারুদ
শুকানো হয় রোদে
আর চন্দ্রমল্লিকার বনে আততায়ীদের কী জমাট আড্ডা বসে গেছে,
নিষ্পত্র নিথর লেকালয় দুঃখ-অধ্যুষিত
সেই পিকাসোর বেয়াড়া ষাঁড়টি যেন তছনছ করে এই নিকানো
উঠোন ঘরবাড়ি
লোকশ্রুত এই কি সোনার বাংলা, এই কি সোনার বাংলা!