আহা! ঘুমাক্ ঘুমাক;
ভাঙ্গানে ঘুম, কেউ ডাকিস্নে ওরে,
তোরা সব চুপ করে থাক্।
কত দিন পরে যদি ওর আঁখিপরে
এল ঘুম,- ঘুমাক্ ঘুমাক;
কত ব্যথা ছিল পোরা ওই ছোটো বুকে,
সব ব্যথা যাক্, মুছে যাক্।
শান্তিময়ী ঘুমকোলে বাছার আমার,-
দগ্ধ প্রাণ আজিকে জুড়াক্;
ভাঙ্গাস্নে ঘুম, কেউ ডাকিসনে ওরে,
তোরা সব চুপ করে থাক্।
কত দিন পরে যদি এল চোখে ঘুম,
আহা! বাছা ঘুমাক্ ঘুমাক;
কত দীর্ঘ রাত মরি গিয়েছিল কেটে-
নিদ্রাহীন ওর আঁখিপরে
আমিও শিয়রে বসি কাটায়েছি রাত-
অবশ মাথাটী কোলে করে।
আসিত নয়নে মোর নিদ্রাবেশ যদি,
কহিতাম ঘুমেরে কাতরে;-
“অভাগীসর্ব্বস্ব ধন নয়নের তারা,
যাও ঘুম তার আঁখিপরে।”
শুনিত না ঘুম মোর সে কাতর বাণী,
চলে যেত আঁখি ত্যজে মোর;
বাছারে করিয়া কোলে অভাগিনী আমি
রজনীটি করিতাম ভোর।
কখনো নিশীথে,- যবে ধরণীর বুকে-
জীবগণ ঘুমে অচেতন;
পশিত জানালা দিয়ে ঘুমন্ত জ্যোছনা,
বসন্তের মৃদু সমীরণ।
জগতের নীরবতা আনিত বহিয়ে
যামিনীর ভাষাহীন কথা;-
দ্বিগুণ অশাস্তি ঢালি দিয়ে যেত প্রাণে
বুঝে যেত মা’র গুপ্ত ব্যথা।
বাছাও বুঝিত বুঝি মায়ের বেদনা
ক্ষীণ বাহু দুটী পসারিয়া-
“তুমি মা পেও না ব্যথা” কহিত কাতরে
ক্ষীণ স্বরে, গলা জড়াইয়া;-
“মিছে কেন ভাবিয়া ভাবিয়া মোর তরে
জীর্ণ কর শরীর আপন,-
ত্যজিয়াছ নিদ্রাহার হায় মা! আমার,”
অশ্রুপোরা নিষ্প্রভ নয়ন-
স্থাপিয়া মায়ের মুখে রহিত চাহিয়া;
অধীরা হইয়া আমি, তার
আঁচলে মুছায়ে চোখ কহিতাম “বাছা
তুমি কি বুঝিবে প্রাণ মা’র!
নিঠুর বিধাতা হায় দিলে নাত তোরে
সন্তানের জননী হইতে;-
কি যে করে মার প্রাণ সন্তানের দুখে
তোমায় তা হ’ল না বুঝিতে।”
রুদ্ধ অশ্রু না মানিত আর বাধা মোর,
উথলি উঠিত সিন্ধুসম;
দুরবল ক্ষীণ হস্ত দিয়ে দিত বাছা
-অশ্রুবারি মুছাইয়ে মম।
এই রূপে কত দীর্ঘ রাত গেছে চলে
রাছার অশান্তি অনিদ্ৰায়;
শান্তিময়ী নিদ্রার প্রসাদে শাস্তি পেয়ে
বাছা আজ পড়েছে ঘুমা’য়।
ওগো তোরা চুপ কর্ চুপ কর্ সবে,
ঘুম থেকে জাগাস্ নে ওরে;
ঘুমা’ বাছা, মা তোর শিয়রে জেগে আছে,
অবশ তনুটী কোলে ক’রে।
নিশ্চিস্ত হইয়া তুই ঘুমা মা’র কোলে,
অশান্তি ভাবনা ঘুচে যাক্;
আমি আছি ভাবিবার কাঁদিবার তরে
অশান্তি আমারি প্রাণে থাক্।
১৪ই কাৰ্ত্তিক, ১৩০১।