আমার হৃদয়

কত না অব্যক্ত ভাব হৃদয়ে রয়েছে ভরা,
প্রকাশিতে করি সাধ, ভাষায় না দেয় ধরা।
নাহি পারি বলিবারে, শুধুই বুঝেছি ভাবে;
হৃদয়ের কথা কিগো হৃদয়ে মিলায়ে যাবে!
দুটী অশ্রুধারা রূপে ফুটিয়া উঠিতে চায়;
পাছে লোকে সে কথার কিছু অর্থ নাহি পায়,
অথবা বুঝিতে এক তারা বুঝে ফেলে আর;
রেখেছি গোপনে রুদ্ধ তাই হৃদয়ের ভার।
সে অব্যক্ত ধ্বনি মোর প্রতিশিরা বহমান,
আধ ঘুম ঘোর প্রায় ছেয়ে আছে এ পরাণ।
কে যেন বসিয়া মোর হৃদয় আসনোপরি,
গম্ভীর নিনাদময় কি বিচিত্র যন্ত্র ধরি-
বাজাইছে অবিরত কি মহা রাগিণী তায়;
সুরগুলি তার, ধীরে আমার পরাণে ভায়।
শুনিয়া সে সুরগুলি কি যেন গো মনে পড়ে,
এ বিস্মৃত মোহমুগ্ধ পরাণ আকুল করে।
মনে হয় “কি যেন গো হোলো না হোলো না হায়!”
মনে হয় “এ জীবন বুঝিবা বৃথায় যায়।”
যে আদেশ শিরে ধরি এসেছি ধরণীপরে,
ভুলে গেছি সমুদায়, আছি মত্ত মদভরে।
যে রাগিণী নিশিদিন ধ্বনিছে হৃদয় মোর,
মনে হয় যেন আমি চিনি তা জনম ভোর।
শুনিয়া সে মহামন্ত্র কত কি যে মনে আসে,
প্রকাশ করিতে তাহা পারি না পারি না ভাষে।
ভুলেছিনু যে আদেশ,- কে যেন গভীর স্বরে
জাগায়ে তুলিছে পুন হৃদয়ের স্তরে স্তরে।

১০ই আশ্বিন, ১৩০১।