অ্যানী বেসাণ্ট্‌

কে তুমি রমণী? দেখি বিদেশিনী,
হিন্দুর অস্পৃশ্যা ম্লেচ্ছকুমারী;
কিন্তু কি বিস্ময়! হেরিয়া হৃদয়
বিষাদে হরষে মগন আমারি।

কেন হিন্দুগণ, কিসের কারণ,
লুটাইছে মাথা চরণে তোমার?
মধুস্নেহ বোলে, করে যেন কোলে-
জননী আপন বিপন্ন কুমার।

দরিদ্র অভাগা বঙ্গবাসীগণে-
এলে বিদেশিনী করিবারে কোলে?
নয়নের জল দিতে মুছাইয়া?
তুষিবারে প্রাণ স্নেহমাখা বোলে?

তত্ত্ব উপদেশ দিবে তাহাদের?
বুঝাইবে কারে হিন্দুধৰ্ম্ম কয়?
বেদোপনিষদ্ করিয়া ব্যাখ্যা-
তাদের,- পবিত্র করিবে শ্রবণ দ্বয়!

জগতের মাঝে শ্রেষ্ঠ হিন্দুধৰ্ম্ম,
হিন্দুর সন্তানে বুঝাইবে তাই?
শত ধন্যবাদ তোমারে রমণী!
কিন্তু,- হিন্দুর কপালে পড়েছে ছাই।

নহিলে কি আজি তোমার নিকটে
হিন্দু ধৰ্ম্ম ব্যাখ্যা শুনিয়া তারা-
অবাক্ হইত!- পূজিতে তোমায়
হইত এমন পাগল পারা?

আপনার ধর্ম্ম আপনি বুঝে না
নিজ শাস্ত্ৰতত্ত্ব খোঁজার ক্লেশ;-
বিধর্মীর শিরে চাপাইয়া সুখে
নিশ্চিস্ত হইয়া রয়েছে বেশ!

হিন্দুনামে শুধু,- প্রকৃত হিন্দুর-
অস্তিত্ব বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে;
ধৰ্ম্মশাস্ত্র শুধু চিহ্নমাত্র আজো-
জগতে জাগায়ে রাখিয়াছে।

ছিল এক দিন জগতের মাঝে
মহাপূজনীয় হিন্দুধর্ম্ম বীর,
ত্রিভুবন জয় করেছিল তারা,-
যোগধৰ্ম্মবলে অটল গভীর।

সেই ধর্ম্মবীর হিন্দুবংশধর
এখনো আছে কি জগতীতলে?
এই দশা হায় এবে কি তাদের!
হিন্দুত্ব ডুবেছে অতল জলে।
* * * *
কে তুমি রমণী, দেখি বিদেশিনী,
হিন্দুর অস্পৃশ্যা ম্লেচ্ছবালা;
কিন্তু কি বিস্ময়! হেরিয়া হৃদয়
মহাবিস্ময় হর্ষবিভলা।

ম্লেচ্ছকুমারী বলিয়া তোমারে
স্বণিতে সাহস হয় না মনে;
ও তব পবিত্র মহৎ হৃদয়
টানিতেছে যেন কি আকর্ষণে।

মানবের ঘরে দেবীরূপে তুমি
কোথা হতে আজি উদয় হলে?
এ ধরণী কি গো বাসভূমি তব,-
অথবা স্বরগ হইতে এলে?

এস এস দেবি! দীন এ ভারতে,
অতি দীন হীন হিন্দুর ঘরে;
ভাসায়েছে ধৰ্ম্ম- কালের প্রবাহে,
শিখাও আবার নূতন ক’রে!

আবার জগতে হোক্‌ অভ্যুদয়-
ধর্ম্মবীর, মহাপ্রাণ হিন্দুজাতি;
ঘুচুক ঘুচুক্‌ এ ঘোর আঁধার!
হউক উজ্জ্বল তপনভাতি।