(১)
কে হিতৈষী শ্রেষ্ঠ জন এ ভব-সংসার-মাঝে?
কাহার অভয় স্বর চিরদিন ধরি বাজে
যুগল শ্রবণে? (সুধা সিঞ্চিত করিয়া প্রাণ)।
মানব-হৃদয়খানি কার স্নেহে অবিরাম,
শ্যামল শীতল চির? কাহার অভাব হ’লে
ধরণী হইতে যেত মানবের নাম চলে?
(২)
এখনো কি বোঝ নাই? প্রকাশিয়া বলি তবে;-
নাম তার ‘আশা’; নর অধীন তাহার সবে।
আশা মানবের ধাত্রী, পরম করুণাময়ী।
ভবিষ্যৎ দৃশ্যপটে আশার মূরতি ওই-
কি মনোমোহন রূপে রহিয়াছে সুচিত্রিত!
চারিদিকে অন্ধকার,
সীমাহীন পারাবার,
আশা-আলো শতদল-মাঝে তারি প্রস্ফুটিত!
হায় মূর্খ নর! তুমি ঘোর পাপ-তাড়নায়
নরকে নিমগ্ন আজি; ভাবিয়াছ বুঝি তাই,-
স্বরগ তোমার কাছে
চির তরে লইয়াছে
বিদায়!- সম্মুখে দেখ! আশার সোণার তরী!
নির্ভয়ে উঠিয়া ব’স;- কুলে দাঁড়াইয়া হরি।
(৩)
অয়ি আশা! বিধাতার অদ্বিতীয় সৃষ্টি তুমি;
তোমার মহিমাপূর্ণ এ জীব-জগত-ভূমি।
মানবের অন্তহীন উন্নতির পথমাঝে,
প্রধান অবলম্বন তোমা বিনা কেবা আছে?
অনাদি মঙ্গলময় ঈশ্বরের প্রিয় দূত,
তুমি না সহায় হ’লে
মানব কিসের বলে
লভিতে তাঁহার পদ, সাধে তপ অদ্ভুত!
তোমার অনন্ত যশ, বর্ণিতে কি পারে ভাষা?
শোক-তাপ-পাপ-হারী,
নর নারী সবাকারি-
দ্বিতীয় জীবন তুমি, অয়ি মধুময়ি আশা!
১৩০৪। শ্রাবণ ।