(ইংরাজীর অনুকরণে)
(১)
“আয় রে বিহগি ও! আয় রে কাছে!
রেখেছি তোর তরে
কত যতন ভরে
কুসুম-শেষ পাতি, সোণার খাঁচে!
“তুলিয়া মনোমত
রসাল ফল কত
কানন ঢুঁড়ে ঢুঁড়ে এনেছি নিজে।
সোণার বাটী ভ’রে
রেখেছি থরে থরে,
শুরসে ভরা ভরা শিশিরে ভিজে।”
(২)
“বাধিত আমি, তব করুণা লাগি।
তবুও শোন অয়ি-
বালিকা স্নেহময়ি!
স্বাধীন প্রাণ আমি বনের পাখী।
“ভাল যে বাসি আমি
ছোট সে নীড়খানি,
স্বাধীন প্রকৃতির কোলের কাছে।
স্বাধীন, খোলা বায়
খেলিতে মন চায়,
উধাও হ’য়ে উড়ে গগন-মাঝে।”
(৩)
“আয় রে পাখি! কাছে আয় রে আয়!
শুকানো খড় পাতা
দিয়া সে নীড় গাঁথা
এ খাঁচা চেয়ে ভাল এত কি হায়?
আমি যে প্রাণ ভ’রে
ভাল রে বাসি তোরে,
ভোলে না তায়, তোর স্বাধীন প্রাণ?
হবি রে সাথী মোর,
বনের খেলা তোর
শিখাবি মোরে; তোর শিখাবি গান।”
(৪)
“খাঁচার নামে হিয়া উঠে তরাসি’!
ভাল কি বাসে কেহ
হায় রে! কারাগেহ?
পরে কি সাধে কেহ গলায় ফাঁসি?
“দিয়া কঠিন শিক
ঘেরা সে চারিদিক,
আসে না বায়ু ভালো, আসে না আলো।
কোথায় খেলিবার
খোলা গগন তার?
কোথায় কাননের শোভা সে কালো?”
(৫)
“আয় রে কাছে মোর আয় রে পাখি!
বন-স্বপন তোর
এসেছে হ’য়ে ভোর,
গগন পানে দেখ চাহিয়া আঁখি।
“লইয়া দল বল
নবীন জলধর
নব-বরিষা-কালে জমিছে আসি’।
বরষি’ অবিরল
অচিরে নভঃস্থল
করিবে একাকার, ফেলিবে গ্রাসি’।
“ডুবিবে রবি, শশী; নিভিবে জ্যোতিঃ।
দিবস হবে রাতি,
বহিবে বায়ু মাতি,
কাঁপিবে ভয়ে, তার প্রকৃতি সতী।
“ভিজা সে ভাঙা নীড়ে
কেমনে রহিবি রে!
একলা নিরজন আঁধারে জাগি’
ক্ষুদে ও প্রাণ তোর
প্রলয়-মাঝে ঘোর
হারাবি হায়! মিছে কিসের লাগি?”
(৬)
“বল কি কথা, অয়ি কুমারি প্রিয়?
বিশাল ধরণীর
হৃদয়ে স্নেহ-নীড়
কোথাও নাহি স্থান তিলেক কি ও?
ভাবনা কিবা তার?
পূরবে(ই) বরিষার
প্রবাস-বাসে মোর যাইব চলি;
পথের দুই পাশ
নবীন শোভা-রাশ
দেখিব মহাসুখে কৌতূহলী।
“কত না গিরি, বন, সাগর, নদী,
যাইব পার হ’য়ে,
নবীন পরিচয়ে
পাইব সাথী কত মাঝেতে পথি।”
(৭)
“অজানা দেশে সেথা
করুণা পাবি কোথা?
বিপদে কার কাছে পাবি রে ঠাঁই?
এমন, সুখ, গেহ,
আদর, এত স্নেহ,
উপেখি’ যাস্ চলি’ অবোধ হায়!”
(৮)
“সহায় পরমেশ-শ্রীপদদ্বয়;
লইয়া তাঁর নাম
ভাবনাহীন প্রাণ,
রহিব যথা তথা কিসের ভয়?
“সুখেতে পরবাস
কাটায়ে কয় মাস,
নব শরতে ফিরে আসিব গেহ।
বিদায় দেহ তবে,
আবার দেখা হ’বে,
রহিবে মনে তব করুণা স্নেহ।”
১৩০৪। জ্যৈষ্ঠ।