বাল্যসখীর বৈধব্য শ্রবণে

একি একি হায়! নিদারুণ কথা
পশিল অন্তরে আজ,
আমারি মতন তোমারো সজনী,
সুখেতে পড়েছে বাজ!

ভেবেছিনু আমি আমারি কেবল
গেছে চলে সুখ সাধ,
আজি একি শুনি, তোমারো সহিত
সাধিয়াছে বিধি বাদ!

আমারি কপাল পুড়িয়াছে জানি,-
ভেবেছিনু আমি সখী,-
থাক্ সুখে থাক্ তোরা সবে তবু,
জুড়াব তোদের দেখি।

একি নিদারুণ অমঙ্গল কথা
জানালে আমায় হায়!
অদৃষ্ট তোমার করিতে স্মরণ
বক্ষ ভাসিয়া যায়-

নয়নের জলে নিবারিতে নারি,
হায়! হায়! বিধি কেন,
কি দোষে কি পাপে সাজালে তোমায়
অভাগী, আমারি হেন।

আমিই আগুনে জ্বলিতেছি সদা,
মরিব আগুনে পুড়ে;
করেছে বিস্তার রাজ্য আপনার-
আঁধার, এ বুক জুড়ে।

ভেবেছি আমি চিরদিন একা
করিব আঁধারে বাস;
না চাহিবে কেহ আসিবার তরে
এ অভাগিনীর পাশ।

নীরবে নিরালা বহিব যতেক
যাতনা অনলরাশি,
অবসন্ন হলে বাল্যসখীদের
দেখিব সুখের হাসি।

তোমাদের সুখ দেখিয়া হৃদয়
জুড়াবে একটু তবু,
হায়! মোরি মত হইয়াছ তুমি
ভাবিনি স্বপনে কভু।

প্রভু পরমেশ, পিতা হয়ে কেন
অবোধ তনয়াপ্রতি,
এ কঠিন শাস্তি করিলে বিধান;
কেমনে এভার অতি-

সহিবে তোমার ক্ষুদ্র তনয়ার
ছোট খাট হৃদি খানি!
দিলে যদি প্রভু এ যাতনাভার,
কহিয়া প্রেমের বাণী-

শ্রবণে তাহার বরষিও সুধা
ঐশী শক্তি দিও তারে;
পেয়ে নব বল, ধৈর্য্য দিয়ে যেন
হৃদয় বাঁধিতে পারে।

সজনী তোমায় কি বলিব আর,
আর কি বলার আছে;
এস দুই জনে কর যোড়ে মাগি
করুণা, পিতার কাছে।

রয়েছে অনেক কাজ আমাদের
খাটিতে পরের তরে,
হইবে শিখিতে পিতার মহিমা-
বিলাইতে ঘরে ঘরে।

পর উপকার এই মহাব্রত
ধারণ করিতে হবে;
নিজ রক্ত দিয়া অপরের প্রাণ-
বাঁচাতে শিখিব কবে!

বিপুল বৃহৎ এ জগৎ মাঝে
কেহ কারো নয় পর-
ভাই বোন সব; এ পৃথিবী শুধু
বৃহৎ এক্‌টী ঘর।

বুঝিতে পারিব কবে এই কথা,
বুঝাইব সকলেরে,-
হয়নি কিছুই- যে কাজ সাধিতে
এসেছি ধরণী পরে।

তাই বলি বোন্ হই অগ্রসর
মহত্তের পথ ধরে,
এই কৰ্ম্মক্ষেত্রে প্রেম দিব ঢেলে,
ভুলিব আপন পরে।

২৮শে ভাদ্র, ১৩০১।