বালকের শোক

(অনুবাদ)

“ওগো- আমার নিকটে ভাইকে আমার
ডাকিয়া আনিয়া দাও,
আমি,- পারি না খেলিতে, একেলা যে আর,
-ভাইকে ডাকিয়া দাও।

দেখ,- আসিল নিদাঘ, ফুটিয়াছে ফুল
কত শত গাছে গাছে;
দেখ,- মধুর আশায় যত অলিকুল
আসিছে ফুলের কাছে।

শুধু- পুঁতেছি মোরা, দু জনে মিলিয়া
ফুলগাছ যত গুলি;
আহা!- কোনটী তাদের গিয়াছে শুকিয়া
কোনটী লুটায় ধূলি।

আর- কে তাদের এবে করিবে যতন;
আঙ্গুরের গাছ যত-
ওই,- দেখ না চাহিয়া, হয়েছে কেমন
ফলভরে অবনত!

কেগো,- আর তাহাদের লইবে তুলিয়া
কোথা মোর ভাই, হায়,
ওগো,- রয়েছে এখন! দাও না ডাকিয়া,
থাকুক না সে যথায়!”

“ক্ষান্ত হও বাছা, সে আর তোমার-
শুনিতে পাবে না কথা;
গিয়াছে সে চলি, ফিরিয়া ত আর
আসিতে নারিবে হেথা!

নিদাঘের মত, শোভা পেয়েছিল
সেই মুখ খানি হায়!
এই ধরণীতে দেখিতে ত তুমি
পাবে নাক আর তায়।

যেমন গোলাপ ক্ষণ শোভাময়,
সৌরভ দুদণ্ড তরে;
সকালে ফুটিয়া আলো করে গাছ,
বিকালে ঝরিয়া পড়ে;-

গোলাপেরি মত, জীবন তাহারে
দিয়াছিলা পরমেশ;
দু দণ্ডের তরে ফুটেছিল শুধু,
-হয়েছে সকলি শেষ।

এবে বাছা তুই এ ধরণী মাঝে
একেলাই খেলা কর্;
তোর সেই ভাই গিয়াছে চলিয়া
অমৃত স্বরগোপর।”

হায়!- “তবে কিগো তিনি এই সমুদায়
ফুল পাখীদের ফেলি,-
ওগো,- এ ধরণী হতে কোথা কত দূরে
গেছেন স্বরগে চলি!

তবে,- আমি এত যে গো, ডাকিতেছি তাঁরে,
হবে কি সকলি বৃথা!
তবে,- নিদাঘের এই সুদীরঘ দিনে,
আসিবেন নাকি হেথা?

আহা!- তটিনীর ধারে, কাননে, প্রান্তরে
দু জনে ধরিয়া হাত,
কত,- বেড়াতাম মোরা, সবি শেষ হল,
সে দিন ফিরিবে নাত।

হায়!- জানিলে এমন, যত দিন তিনি
ছিলেন ধরণীপরে-
এই,- নয়নে নয়নে রাখিয়া তাঁহারে
দেখিতাম প্রাণ ভরে।

আমি,- মন প্রাণ ঢেলে আরও তাঁহারে
লইতাম ভাল বেসে;
হায়,- যদি জানিতাম, রহিবে পড়িয়া
হাহাকার শুধু শেষে!-

মেমার্স্‌, হেমান্।
৭ই আশ্বিন, ১৩০১।