বিধবা কিশোরী

আমার কি যেন ছিল, এখন নাহিক আর;
তাহারি অভাবে শুধু যেন এই হাহাকার।
থেকে থেকে তারি তরে ওঠে যেন দীর্ঘ শ্বাস,
অশ্রু দেখা দেয় চখে, অধরে মিলায় হাস।
হয় ত রয়েছি আমি প্রিয় সখীদের সাথে,
কথোপকথনে মগ্ন বিমল চাঁদিনী রাতে;
মধুর জ্যোছনা রাশি পড়েছে কোলের পরে,
অবিন্যস্ত চুল লয়ে সমীরণ খেলা করে।
ভেসে আসে ফুল গন্ধ কুসুম কানন হতে,
কে জানে আপন মনে গাহিয়া কে চলে পথে;
সে আকুল তান তার মরম পরশে মোর,
সহসা হৃদয় উঠে হইয়া আকুল ঘোর।
না ফুরাতে মাঝখানে বাক্যস্রোত থেমে যায়,
ধীরে ধীরে ঘন ঘোর আঁধার পরাণ ছায়!
কি জানি কি মনে পড়ে কিছু ভাল নাহি লাগে,
বুঝিতে পারি না মোর মরমে কি ব্যথা জাগে।
হয় ত কখন আমি দুপুরে নিজন বাসে-
গাহিতেছি আনমনে, বসি জানালার পাশে;
গাহিতে গাহিতে গান হয়েছি আপনহারা,
ভাবেতে ডুবিয়ে গেছি যেন পাগলিনী পারা।
সহসা ভাঙ্গিল ঘোর একটী পাখীর ডাকে,
কি বলে করুণ সুরে বসি বকুলের শাখে?
বাতাসের কোলে ধীরে গান মোর মিলে যায়,
পাখীর বিষাদ তানে প্রাণ কেন ব্যাকুলায়!
হাসিরাশি কেন হয় পরিণত অশ্রু ধারে,
মৰ্ম্মভেদী কেন ওঠে দীর্ঘ শ্বাস বারে বারে!
কি যেন গো মনে পড়ে কিছু ভাল নাহি লাগে,
বুঝিতে পারি না মোর প্রাণে কি বেদনা জাগে।

বসন্তের সুপ্রভাতে কখনো কুসুম বনে,
চয়ন করিয়া ফুল গাঁথি বসে শিলাসনে;
বিহগ বিহুগী কত বসিয়া তরুর পরি,-
গাহিছে প্ৰভাত গাথা সুমধুর তান ধরি’।
প্রভাত কিরণ মাখি কত শত পাখী খেলে-
মেঘহীন সমুজ্জ্বল সুনীল গগনকোলে।
কাঁপাইয়া তরুলতা প্রভাত বসন্ত বায়-
বহিছে, কি যেন ধীরে মোর কাণে কহে যায়।
বুঝিতে পারি না তার সে মৃদু নীরব কথা,
শুধু জেগে ওঠে মোর প্রাণের ঘুমন্ত ব্যথা।
কি যেন গো মনে পড়ে নাম তো জানি না তার,
কাঁদিয়া আকুল হই বহে চখে শত ধার।
ছড়ায়ে ফেলিয়া দিই কুড়াইমু যত ফুল,
জানি না কুড়ানু কেন- এমনি মনের ভুল।
চিনিতে নারিনু আমি আপনার প্রাণ মন,
কিসের অভাব মোর বলে দেবে কোন্ জন!

আশ্বিন, ১৩০১।