“বিধবা।”

ওগো তোরা বলিস্ নে কেউ,
ও ভীষণ নিদারুণ কথা!-
শেলসম বাজে বুকে মোর,
প্রাণে জেগে উঠে শত ব্যথা।

হয়েছি যা দেখিতে ত পাস্,
মুখে বলে কি হবে গো আর;
ভয়ঙ্কর কথা ওই মোরে
শুমানে মিনতি আমার।

জ্বলন্ত আগুন মাখা যেন
মোর কাছে ও “বিধবা” নাম,
জানি, তাই হয়েছি যে আমি,
জেনেছি বিধাতা মোরে বাম।

কিন্তু তবু পারি না সহিতে-
বিধবা আমারে যদি বলে;
বুক ফেটে যায় যেন মোর,
সপ্ত সিন্ধু নয়নে উথলে।

ওগো আমি স্বপনে না জানি,
এই দশা হবে যে আমার;
হায়! হায়! কোন্ পাপে বিধি
দিলে মোরে এ যাতনা ভার।

“অলক্ষণা” হয়েছি এখন
ভাগ্যবতী সধবার কাছে,
শুভকাজে, যোগদান দিতে
নারিব,- অশুভ ঘটে পাছে।

হা হা বিধি কি করিলে মোর-
রাখিলে না একটুও স্থান
কেড়ে নিলে রমণীর সার,
শূন্য করে হৃদি মন প্ৰাণ।

ছিনু আমি কত আদরিণী,
জানি নি অবজ্ঞা কারে বলে;
কপালের দোষে শুধু আজি
সবে মোরে পায়ে যায় দলে।

অবজ্ঞেয় হয়েছি এখন
স্বামী-স্নেহে-সোহাগিনী কাছে,
বিষ খেয়ে মরিতাম, যদি
জানিতাম কপালে এ আছে।

সে মরা সুখের মরা ছিল;
পতির চরণে রেখে মাথা-
বিসর্জ্জন করা তুচ্ছ প্ৰাণ,
কত বড় সৌভাগ্যের কথা!

আছে যাহা বিধির লিখন,
বিপরীত হবে কি করিয়া;
কত দিন জানি নাত আরো
র’তে হবে এ প্রাণ ধরিয়া।

কাঁদিতে, বেদনা স’তে শুধু
জনম আমার ধরামাঝে;
নতুবা এ পাষাণ হৃদয়
লাগিবে কাহার কোন্ কাজে।-

দুঃখীর মুছাতে আঁখিজল,
ব্যথিতে সান্ত্বনা দিতে দান;
অনাথের হইতে সহায়,
তাপিতের জুড়াতে পরাণ।

বুকপোরা বেদনা যাহার,
অশ্রুপোরা নয়ন যুগল;
প্রেমের অভাবে হৃদি যার
হইয়াছে অবশ বিকল;

তার দ্বারা হবে কোন্ কাজ!
শুধু মাতা ধরণীর ভার-
বাড়াইতে লভেছে জনম,
দেখিতে পাই না উপকার।

তবে আমি কেন জ্বলে মরি-
লোকে মোরে অবজ্ঞা করিলে;
চমকি ‘শিহরি’ কেন উঠি,
কেন কাঁদি ‘বিধবা’ বলিলে?

ও নাম অসহ্য কেন মোর
জানি নাত কারণ ইহার;
ভাবিলে বিদরে যেন প্রাণ,
থাকি না আমাতে আমি আর।

২৬শে আশ্বিন, ১৩০১।