বিফল জনম

(১)
কার্‌ কাছে হায়! করিস্ রোদন?
কে মুছাবে আঁখি-জল?
হৃদয়েই রাখ্‌ হৃদয়-বেদন,
প্রকাশে কি আছে ফল?
পিতা মাতা ভ্রাতা নাই যার কেহ,
নাহি আপনার আশ্রয়-গেহ,
তার তরে প্রীতি সমাদর স্নেহ,
রয়েছে কোথায় বল্‌?

(২)
একি কার ‘পরে কর তুমি রোষ?
কারে কর অভিযোগ?
তোমারি সকল ললাটের দোষ,
তোমারি করম-ভোগ;
থাকে যদি বল বাহুতে তোমার,
হৃদয়ে সাহস যদি থাকে আর,
কর বিস্তৃত নিজ অধিকার,
-ছাড়ি ক্রন্দন শোক!

(৩)
অবলা রমণী মত গৃহকোণে
মাটিতে লুকায়ে মুখ,
কাঁদিতে কি লাজ নাহি বাস মনে?
ফাটিয়া যায় না বুক?
এতই অধম, এত হীনবল,
পুরুষের হিয়া এতই কোমল?
তোরে দেখে হাসে প্রতিবাসিদল,
করে কত কৌতুক।

(৪)
‘আপনার মান আপনার ঠাঁই,’
তাহাও কি শিখাবার?
ভীরু কাপুরুষ হেন দেখি নাই,
ধিক্ ধিক্ শতবার!
তোর তরে চোখে ঘুম নাই কা’র?
কে সে দিবে ডালি সুখ আপনার?
স্মরিয়া তোমার কোন্ উপকার
শোধিবে কে ঋণভার?

(৫)
কেন জনমিলি জগতের মাঝে
সাথী হ’য়ে দীনতার?
পরের দুয়ারে ভিক্ষুক-সাজে
কিবা সুখ দাঁড়াবার?
কঠোর বাক্য নীচ জঘন্য,
কভু তারি সনে মুষ্টি অন্ন,
প্রাপ্য শুধুই;
নাহিক অন্য
উপায় কি কিছু আর?

(৬)
এর চেয়ে যে রে! মৃত্যু কুশল,
লক্ষ অধিক বার!
সুলভ, সুগম, শান্তি-শীতল,
বিস্তৃত কোল তার।
দীনদয়াময়ী তারে শঙ্কা কি?
সমাদরে কাছে লইবে সে ডাকি;
লজ্জা ভীরুতা সব দিবে ঢাকি’
অঞ্চলে আপনার!

৪ঠা আষাঢ়। ১৩০৩ সাল।