প্রথম বহিছে আজি হেমন্ত-সমীর,
ধীরে, আত্মীয়ের মত ফিরে চারি পাশ;
স্পর্শে তার কণ্টকিয়া উঠিছে শরীর
হৃদয় ব্যাপিয়া ফেলে বিষাদ, উদাস।
অতি ক্ষীণ, ক্রন্দনের সুর যেন কাণে
পশিছে, সমীর-স্বরে; প্রতিধ্বনি তার-
ধ্বনিছে পরাণে যেন; কোথা কোন খানে
কাঁদিছে কে?- কি ব্যথা বেজেছে বুকে কার?
আমারি হৃদয় একা সে স্বরে বিকল
নহে। হের, দেখ চেয়ে, সমস্ত প্রকৃতি
শ্রীহীনা, মলিনমুখী, বিষণ্ণ, বিহ্বল!
মনে প’ড়ে যেন কোন্ অতীতের স্মৃতি,-
চোখে আসে জল, প্রাণে বল আসে টুটে’;
মেটে নাই যে পিপাসা তারি হাহাকার
মথিয়া জীবন মন ওঠে যেন ফুটে’;
শূন্যতা ভরিয়া যেন উঠে চারি ধার।
জড় প্রকৃতির সনে মানবের মন,
চির যুগ জন্ম ধরি’ এক ডোরে বাঁধা;
কেহ পর নয়, দোঁহে নিতান্ত আপন;
দোঁহার হৃদয়, এক রাগিণীতে সাধা!
সুখে দুঃখে দুজনায় নিত্য পাশাপাশি:
একই ব্যথা দুজনার বেজে ওটে প্রাণে;
একই হর্ষে দুজনার ফুটে ওঠে হাসি;
-চিরদিন চেয়ে, দোঁহে দুজনার পানে।
কে গো সে, অলক্ষ্যে বসি’ দুজনার প্রাণ
বাঁধি’ দিল এক সূত্রে, মায়ামন্ত্র পড়ি’?
কোথা সে অমর যন্ত্রে রাগিণী মহান্
ধ্বনিয়া তুলিছে কে গো চিরদিন ধরি’-
নব নব সুরে? প্রাণে, তালে তালে তার
নব নব জেগে ওঠে ভাব, দুজনার।-
কখনো গৌরব-দৃপ্ত সুর, সে বীণার;
উদ্বেলিত করুণায়, কখনো আবার;
কখনো আনন্দধ্বনি; কখনো বিলাপ;
বাজিছে, সে মহাযন্ত্রে বিরাম-বিহীন।
নহে ইহা কল্পনার অসার প্রলাপ;-
ওই বীণাস্বর, স্তব্ধ হইবে যে দিন,
বাদনে হইয়া শ্রান্ত, লক্ষ যুগ ধরে,
যেক্ষণ হ’বেন ক্ষান্ত, বিশ্রামের লাগি’
বাদক ইহার,- হ’বে নিমেষ ভিতরে
মুদ্রিত, মৃত্যুর কোলে ব্রহ্মাণ্ডের আঁখি!
১৩০৪।