বরিষা হৃদয়

(১)
প্রকৃতি আমারি মত তোমারো আজিকে,
কেন মুখ ম্লান?
এ বিষম ব্যথা মোর,
বুকে কি বেজেছে তোর,
অভাগীরে দেখে আজি আকুল কি প্রাণ?

(২)
কি ছিনু কি হইয়াছি, দেখিয়ে কি তাই-
ফাটিছে হৃদয়?
দেখে এ মলিন বেশ,
মনে কি হতেছে ক্লেশ,
তাই কি গো দরদর অশ্রুধারা বয়?

(৩)
রাজরাজেশ্বরী বেশ কোথায় তোমার,
লুকাইল আজ্‌;
কেন গো আজি এ বেশে,
দেখা তুমি দিলে এসে,
আমারি দুখেতে কি গো তোমার এ সাজ?

(8)
সকলি বিষাদমাখা যে দিকে নেহারি,
হুহু করে প্রাণ;
বুক কেঁপে কেঁপে উঠে,
চ’খে অশ্রুধারা ছুটে,
আকুল আঁধারমাখা শূন্য এ পরাণ৷

(৫)
ভগ্ন স্বরে কেঁদে কেঁদে বায়ু বহে যায়
হইয়া আকুল;
পাখীরা গাইছে গান,
তুলিয়া করুণ তান,
কাঁদিতেছে তরুলতা,- ম্রিয়মাণ ফুল৷

(৬)
কি এক উদাস ভাব রয়েছে ছাইয়া
অন্তর বাহিরে;
হারায়েছি সব সুখ,
খালি হয়ে গেছে বুক,
পূরিবে না শূন্য বুক এ জনমে কি রে?

(৭)
হৃদয়আকাশে মোর এক খানি মেঘ
কোথাও ছিল না;
একি! একি! অকস্মাৎ,
বিনা মেঘে বজ্রাঘাত,
বালিকা বধিতে কেন এতেক ছলনা।

(৮)
অভাগীর কপালেতে সুখ যদি বিধি,
নাহি লিখেছিলে;
কেন দিলে সুখস্বাদ,
যদিই সাধিলে বাদ,
শৈশবেই কেন হায়! মোরে না বধিলে!

(৯)
কি দোষ করিয়াছিল অবোধ বালিকা
তোমার চরণে;
যাহাতে আজিকে হায়!
দহি এত যাতনায়,
অভাগী বালিকা সদা ডাকিছে মরণে।

(১০)
এস গো মরণ! এস, শাস্তিমাখা কোলে
তুলে লও মোরে;
পারি না সহিতে আর,
এতেক যাতনাভার,
রহিতে পারি না আর আঁধারের ঘোরে।

(১১)
জননীর মত মোরে বুকে ভুলে লও,
ঘুম দিও চ’খে;
প্রশান্ত শ্যামল ছায়ে,
রব আমি ঘুমাইয়ে,
পরশিতে না পারিবে শোক তাপ দুখে।

(১২)
না না আমি বড় অভাগিনী, মোর কাছে
তুমিও এস না;
পরশ করিলে মোরে,
শান্তি তব যাবে দূরে,
গভীর শ্যামল কান্তি হইবে ভীষণা৷

(১৩)
কাঁদিবার তরে শুধু এসেছে অভাগী
এ ধরণী পরে;
শত ধারে অবিরল,
ঢালিব নয়ন জল,
ফেলিবে না কেহই নিশ্বাস মোর তরে।

(১৪)
প্রকৃতি লো তুমি ছাড়া এ ঘোর যাতনা
কে বুঝিবে আর;
তুমিই সঙ্গিনী মোর,
তুমিই জনম ভোর
দিয়াছ আমারে স্নেহ- সান্ত্বনা ব্যথার।

(১৫)
এক টুকু সুখস্বাদ পেয়েছিল যবে
এ হতভাগিনী;
তখনও তোমারি পাশে,
নিরালা নিজন বাসে,-
ঢালিত তোমার কাণে সে সুখের বাণী।

(১৬)
আজি এ ভীষণ ব্যথা তুমি বিনা আর
জানাব কাহারে;
এস আজি নিরজনে,
মন খুলে দুই জনে,
কাঁদিয়া ভাসাই উভয়েরে শতধারে।

১৬ই শ্রাবণ, ১৩০১।