বর্ষায়

আজ, নব বরিষা-দিন, আকাশে নব ঘন,
নব সলিল-ধারা ঢালিছে অনুখন।
নবীন-কিশলয়-শ্যামল তরু লতা,
নীরবে কুতূহলে সিনানে যেন রতা।
পিয়াসী চিরদিন, চাতক দলে দলে,
মিটায় আশা আজি, হরষে মেঘ-জলে।
চমকে মৃদু মৃদু বিজুরী থেকে’ থেকে’;
নীরদ গুরু গুরু উঠিছে ডেকে’ডেকে’।
নীল-নীরদ-কোলে শ্বেত বলাকা-সারি,
সাগরে ফেন হেন শোভিছে মনোহারী!
সরসী ক্ষীণকায়া, হরষে ঢলঢল,
ছল ছল উছলি’, চলিছে কল কল।
শৈবাল-দল-মাঝে রূপেতে আলো করা
ফুটিয়া শত শত সরোজ মনোহরা।
মরাল বিহরিছে, পুলকে বাঁধি দল,
নীরস রবে ভেক বিদরে ধরাতল।
জন-মানব-হীন কানন-পথ-পার
শোভিছে মন্‌দির-শিখর দেবতার।
নবীন-ফুল-ভারে কদমতরু-সারি,
সরমে নত যেন সম যুক্তী নারী।-
বাতাসে ভেসে আসে সৌরভ মধুর,
জাগিছে কত কি যে মনোমাঝে বিধুর!
কবি-কাহিনী কত সে কালের পুরাণো,
মনে হয় আজো যেন রহিয়াছে জড়ানো!
* * * *
চক্ষু-পরে যেন স্বপন-আবরণ
পড়িছে ধীরে ধীরে কি মন্ত্রে মোহন!
* * * *
যমুনা বলি’ মনে হ’তেছে সরসীরে,
কেলি-কদম-গৃহ ওই যমুনাতীরে!
দাঁড়ায়ে তলে তার, শ্যাম বাঁশরী করে,
উঠিবে বাজি’ বাঁশী এখনি ক্ষণ পরে!
নারী-সুলভ ভয় ত্যজিয়া অনায়াসে,
দেখিব বনপথে রাধিকা চলে আসে।
সমীরে অঞ্চল জয়-নিশান-সম
উড়িবে যাবে ভিজি’ কাঞ্চলী বসন।
নূপুর-শিঞ্জন শুনিয়া দূর হ’তে,
আসিবে দ্রুত শ্যাম আগুবাড়ায়ে ‘তে।
* * * *
দৃশ্যপট আরো নেহারি শত শত,
পূর্ণ কত শোভা বেদনা সুখ কত!-
* * * *
কেবলি সাঁধ আজি হ’তেছে মনে মনে,
এমনি যাক্ দিন বাস্তবে স্বপনে!

১৩০৩। আষাঢ়।