এই তো বসন্ত এসেছে আবার!
সেজেছে প্রকৃতি নবীন সাজে;
উথলি উঠিছে আনন্দ ধরার,
কেন ব্যথা মোর এ বুকে বাজে?
মৃদু মন্দ বহে মলয় বাতাস,
‘কুউ কুউ’ পিক গাহিছে শাখে;
কেন হয় মোর হৃদয় উদাস?
কিসের আগুন হৃদয়ে জাগে?
কিছু যে বুঝি না শুধু ভেবে মরি,
শুধু কেঁদে মরি ব্যাকুল প্রাণে;
অশাস্তি হয়েছে সদা সহচরী,
জানি না শাস্তি পাব কোন্ খানে।
কে যেন ছিল গো সে যেন গো নাই,
এ হৃদয় শূন্য অভাবে তার;
কাঁদিয়া কাঁদিয়া শূন্য পানে চাই,
মৰ্ম্মভেদিয়া উঠে হাহাকার।
তাঁরি বিহনে কি এই দশা মোর?
তাঁরে হারায়ে কি হয়েছি একা?
তাঁরি অভাবে কি এ যাতনা ঘোর?
-হয়েছিল শুধু নিমেষ দেখা।
জীবিত থাকিতে এক দিন তরে
ভালো কোরে কভু কথা কহিনি;
ভালো বাসিয়া তো সে মুখের পরে
এক দিন তরে কভু চাহিনি।
করিলে আদর তিনি, বাসি ভালো;
সরমে মরমে মরিয়া যেন-
যাইতাম দূরে, লাগিত না ভালো।
ছিলাম চপলা বালিকা হেন।
কথায় কথায় করিতাম রাগ,
দিতাম সে বুকে কতই ব্যথা;
ছিল সে হৃদয়ে ভরা অনুরাগ;
না বুঝে, কত না কঠিন কথা-
কহিতাম তাঁয়, আমি অভাগিনী।
তখন কি জানি এমন হবে?
এই ধন লাগি তখন জানিনি-
চিরদিন ধ’রে জ্বলিতে হবে।
হারাইনু আমি অবহেলে হায়!
মাণিক রতন পাইয়া করে;
নাহি দেখিলাম ভালো কোরে তাঁয়,
চুরি কোরে গেল লইয়া চোরে।
করিয়াছি দোষ কত তাঁর কাছে,
করিতেন তিনি সকলি ক্ষমা;
জ্বলন্ত অক্ষরে সবি লেখা আছে
বুকের ভিতরে অনল সমা!
কে ভালো বাসিতে পারে তাঁর মত
অভাগীরে আর ধরণী মাঝে?
কে ক্ষমিবে আর অপরাধ শত,-
বল প্রদানিবে সকল কাজে?
কে সহিবে মোর সে দুরন্তপনা-
হাসি হাসি মুখে ভালো বাসিয়া?
কে আছে এমন ভুলিয়া আপনা,
সাধিবে আমার হিত ভাবিয়া?
সে জন নাহিক আর এ জগতে,
গিয়াছেন তিনি কি জানি কোথা!
এবে একাকিনী মোরে হবে র’তে,
অভাগী বিধবা সাজিয়া হেথা।
নাই আর কেহ দয়া করিবার
এখন আমারে বসুধামাঝে;
ঘৃণা অবহেলা এখন আমার
পাইতে হইবে লোকের কাছে।
নিরাপদ দুর্গ এ জগতীতলে
একমাত্র মোর ছিলেন তিনি,
পুড়েছে সে গৃহ কালবজ্রানলে,
না পুড়িল কেন এ অভাগিনী!
১৯শে ফাল্গুন, ১৩০১।