কেন এ সমাজ, কেন এ বন্ধন,
কেন ভেদাভেদ, বল না?
প্রেমের রাজত্বে কেন অবিচার,
কেন গো এ সব ছলনা?
মানুষে কেন গো মানুষের প্রতি,
এত অত্যাচার করিছে।
পিতার সন্তান সকলি সমান,
তাহা কি কখন স্মরিছে?
এই বসুন্ধরা জননী মোদের,
জননীর কোলে রয়েছি।
জগৎ ব্যাপিয়া আমাদের গৃহ,
-কিছু না অভাব পেয়েছি।
আমাদের এই বিপুল সংসারে,
কোটী কোটী ভাই ভগিনী,।
-পর নহে কেহ এক রক্ত-স্রোত,
বহিছে সবার ধমনী।
তবে কেন বল এত ভেদাভেদ,
মানুষে মানুষে করিছে।
ভাই হ’য়ে ওগো কেমন করিয়ে,
ভায়ের সকলি হরিছে।
প্রবল কেন গো দুৰ্ব্বলে দেখিলে,
চায় চরণেতে দলিতে।
হাসি হাসি মুখে পারে অকাতরে,
আপন ভায়েরে ছলিতে।
ওগো কেন এত অত্যাচার-স্রোত,
প্রেমের রাজত্বে বহিছে।
কেহ বলবান্ মহা তেজীয়ান্,
কেহ ম্লানমুখে সহিছে।
মহা অহঙ্কারী ধনবান্ কেহ,
অর্থের গুমরে মরিছে।
কেহ অর্থহীন,
নিঠুর পীড়নে
সদা হাহাকার করিছে।
পারি না পারি না দেখিতে যে আর
ভায়ে ভায়ে এত ছলনা।
পিতা পরমেশ! তব রাজ্যে কেন,
এত অবিচার বল না?
ভায়ে ভায়ে পুন জাতিভেদ কেন,
জাতি কারে বলে জানি না।
তোমার অধম সন্তানদের,
বুঝেছি এ শুধু কল্পনা
ছিঁড়ে দাও পিতা এই জাল-পাশ,
নহিলে কে আর ছিঁড়িবে।
অক্ষম দুর্বল সন্তান তোমার,
-এত শক্তি কেবা ধরিবে।
করুণ নয়নে চাহ চাহ পিতা!
আমাদের আর কে আছে!
ঘুচাও বন্ধন দুঃখ তরাস,
তোমার তনয়া এই যাচে।
উচ্চ নীচ আর ভেদাভেদ জ্ঞান,
হিংসা দ্বেষ ক্রোধ ছলনা।
ধরণী হইতে এ সব কলঙ্ক,
কবে গো মুছিবে, বল না।
অধীনতা প্রথা যাইবে উঠিয়া,
সবাই স্বাধীন হইবে।
মানুষ হইয়ে মানুষের কেন,
দাসত্ব আবার করিবে?
পিতা পরমেশ দেব দয়াময়!
সকলি ত তুমি জানিছ।
কি পাপে গো তবে ধরণীর বুকে,
এ বিষম ব্যথা হানিছ।
ঘুচাও ঘুচাও এ পাষাণ-ভার,
-পারে না যে আর বহিতে।
শোক তাপে জীর্ণ এ ধরণী, আর
নাহি পারে ব্যথা সহিতে।
বরিষ করুণা, বরিষ গো প্রেম,
তোমার অধম সন্তানে।
আমাদের এই বিপুল সংসার,
বাঁধহ প্রেম-বন্ধনে।
কোটী কোটী এই ভাই বোন্ মোরা,
একতানে সবে মিলিয়ে,
রহিব পুলকে জননীর কোলে,
তব প্রেমে র’ব মাতিয়ে।
১৩০০; ফাল্গুন।