যাবে যে, তাহারে আর
কেন সাধ রাখিবার?
যেতে দাও, যাক্ চলে তবে;
সময়ের স্রোতে নীত
চির-হীন পরিচিত
দুটী প্রাণ মিলেছিল যবে,
ভেবেছিল কি তখন
সে প্রবাহ অনুক্ষণ
এক(ই) পথে এক(ই) সাথে ব’বে?
যাক্ কিবা ক্ষতি তায়?
“কি তুমি বলিছ হায়!
কারে দিতে বলিছ বিদায়
ক্ষতি নাই? তুমি তার-
কি জানিবে সমাচার?
নহে, নহে- শুধু এ খেলাই!
সময় নিমেষে আসে,
দাগ তার হিয়া মাঝে
চিরকাল তরে থেকে যায়!”
“বিস্মৃতি” কি অভিধান
অর্থশূন্য শুধু নাম
করে তবে মিছাই বহন?
“সত্য হোক্, যদি হয়;
কিন্তু কি কঠোরময়
ওই তিন-অক্ষর বচন!
বক্ষে সদা রাখি’ যারে,
তৃপ্তি তবু হয় না রে!
বুঝি শত সহস্ৰ জনম,-
যারে দেখি’ দেখি’ দেখি’,
ক্লান্ত নাহি হয় আঁখি,
নিমেষে নিমেষে তৃষা বাড়ে,
একি কভু প্রাণ চায়?
এত কি সহজ হায়!
সাধ ক’রে ভুলে যাওয়া তারে?
দেখ বিশ্ব চরাচরে
এই ধর্ম্ম ঘরে ঘরে,
ভুলিতে কে চায় কোথা কারে?
ওই পশ্চিমের পথে
সোণার মেঘের রথে
চলে আজিকার মত রবি;
অধীন সে নিয়তির,
কিন্তু মন নহে স্থির,
হের তার বয়ানের ছবি!
ধরণীরো মুখে চোখে,
কি বিষাদ ওঠে জেগে,
-সহসা বিলীন শোভা সবি!
জানিছে মিলিবে ত্বরা,
কি কাতর, কি কাতরা,
তবু দেখ দুজনার মন;
ক্ষুদ্র নিমেষের তলে
অনন্ত মুহূৰ্ত্ত চলে,
কাল-চক্র কে করে লঙ্ঘন?
তাই ভালবাসি যারে,
চোখে চোখে রাখিবারে
সদা সাধ, সদা আকিঞ্চন!
অবিরত শত ফাঁসে,
অতি দৃঢ় নাগপাশে,
বাঁধিয়াও তৃপ্ত নহে প্ৰাণ।
একটু শিথিল হ’লে,
একটু আড়ালে গেলে,
কে জানে তাহার পরিণাম!
যে প্রবাহ আনিয়াছে
দূর হ’তে এত কাছে,
-চির তাহা থাক্ বেগবান্।”
আপন মনের মত
করে আশা অবিরত
দুর্ব্বল মানব সাধারণ।
আছে শ্বেত আর কৃষ্ণ,
সকলেরি দুই পৃষ্ঠ;
দুই হয় করিতে গ্রহণ।-
একেরে আনন্দে বরি’,
একেরে উপেক্ষা করি’,
নিশ্চিন্তে কে রয়েছে কখন?
সাহস, দৃঢ়তা দিয়া
প্রস্তুত করিয়া হিয়া
যে জন রাখিতে সদা পারে,
পুষ্পবৃষ্টি, বজ্র আর,
সে জন দুয়েরি ভার,
-ক্লিষ্ট নাহি হয় বহিবারে!
“বিষম এ শাস্ত্র-রণে
ক্লান্ত আমি তব সনে,
-এস দেখি স্নেহে কেবা হারে?”
১৩০৪। ২১ মাঘ।